Published : 08 Jul 2023, 05:53 PM
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় এই বছরের রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮২০ জন হাসপাতালে গেছেন। তার মধ্যে ৬০৩ জনই ঢাকায় এবং ২১৭ জন ঢাকার বাইরের।
এ নিয়ে চলতি বছর এপর্যন্ত ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২ হাজার ১১৮ জনে।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে দুজন মারা গেছে। তাদের নিয়ে ডেঙ্গুতে এ বছর মৃত্যু হল ৬৭ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, জুলাই মাসের প্রথম ছয় দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া জুলাইয়ে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দেশের অনেক হাসপাতাল ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য দেয়নি। দুইদিনের তথ্য যোগ করে শনিবার নতুন আক্রান্তদের তথ্য প্রকাশ করেছে অধিদপ্তর।
এবার বর্ষা মওসুম শুরুর আগে থেকেই এইডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত রোববার দেশে ৫০৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যা এ বছরের সর্বোচ্চ।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৫০২ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৭৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭২৯ জন।
মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ‘ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে’ ভুগছিলেন এবং ‘শক সিনড্রোমে’ মারা গেছেন।
এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বাধিক। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।
এ বছর এইডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বর্ষা পূববর্তী জরিপের তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ঢাকার ১১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার ঝুকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
এইডিস মশার উপস্থিতির চিত্র শনিবার ঢাকা উত্তর সিটির এক অভিযানেও বেশ টের পাওয়া গেছে। এদিন মেয়র আতিকুল ইসলাম মোহাম্মদপুর এলাকার ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে পাঁচটি বাড়ির নিচতলায় জমে থাকা পানিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
এইডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় জাপান গার্ডেন সিটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা
সমন্বয়হীনতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি সংকটে: টিআইবি
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ সারাদেশে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এ জাতীয় সতর্কবার্তা ছিল। এরপরেও রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক।”
পরিস্থিতি সামলানোর উপায় তুলে ধরে তিনি বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে মুনাফাভিত্তিক কীটনাশক নির্ভরতার ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্যান্য সব প্রকার পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে দুই সিটি করপোরেশনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কোভিড সংকটের অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে পরামর্শক প্যানেল গঠন ও যথাযথ গুরুত্বসহকারে নিয়মিতভাবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।”
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এইডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তা প্রচারের পরামর্শ দেন তিনি।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশেই এখন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই এটিকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণা দিয়ে জাতীয় পর্যায় থেকে সমন্বিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে মশা নিধনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষমতার ঘাটতি জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে বহুগুণ।”