দাবি মেনে নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
Published : 11 Feb 2025, 04:36 PM
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা চাকরি ফিরে পাওয়াসহ ৬ দাবি নিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
মঙ্গলবার সকালে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে; সেখানে সাবেক বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে তাদের স্বজনরাও আছেন। তারা এ কর্মসূচিকে 'জাস্টিজ ফর বিডিআর' বলে আখ্যায়িত করছেন আন্দোলনকারীরা। বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করছে।
দুপুর পৌনে দুইটায় অবস্থান কর্মসূচি থেকে দাবি মেনে নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
শহীদ মিনারে অবস্থানরতদের ছাত্র-প্রতিনিধি মাহিন দাবিদাওয়া তুলে ধরে বলেন, "পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের সবাইকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
"জেলবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রহসনের বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে। গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ব্যতীত শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) নং ধারা বাদ দিতে হবে। একইসাথে স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত সর্বপ্রকার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে এবং পিলখানা হত্যাকান্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।"
জেলের ভেতরে মারা যাওয়া বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মাহিন সরকার।
তিনি বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া বাহিনীর সাম বিডিআর ফিরিয়ে আনা পিলখানার হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করা ও শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।“
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য মো. সাইফুর ইসলাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। বুধবার দুপুরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।“
'চাকরিচ্যুত বিডিআরদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া চিন্তা করা হচ্ছে না ' বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং তাদের স্বজনরা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পনের বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
গত ২১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে কারাগারে আটক ১৭৮ জন বিডিআর জওয়ানের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এর দুইদিন পর জামিনে মুক্ত হন তারা।