এর আগে তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই যমুনায় থেকেছেন।
Published : 08 Aug 2024, 12:00 PM
অন্তর্বতীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য দেশের পথে থাকা মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা।
বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভবনটি সাজানো গোছানোর কাজ করছে। ভবনের চারপাশের সীমানা প্রচীরের গাছের ঝুল কাটা হচ্ছে।
একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের সরকারপ্রধানের জন্য ঠিক করা হচ্ছে। আমরা মাঠের ঘাস কেটছি, গাছগাছালি পরিষ্কার করছি। এখানে উনি থাকবেন, সেইভাবে প্রস্তুতি কাজ হচ্ছে।”
ভবনের ভেতরে কারা আছে জানতে চাইলে এই কর্মী বলেন, “মিলিটারি আছে।”
ভবনের সামনে এখনো নিরাপত্তা বেষ্টনী বসানো হয়নি। আধা খোলা প্রধান ফটকের ভেতরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ঝাড়ু দিতে দেখা যায়।
এর আগে ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান তাদের দায়িত্বের দিনগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনাতেই ছিলেন।
২০০৮ সালে এক-এগারোর পট পরিবর্তনের পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমেদও এ ভবনেই থেকেছেন।
সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম ভূঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারও প্রধান উপদেষ্টার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল শাখা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। লনগুলো পরিষ্কার করা, ঘাস কাটার কাজ শুরু হয়েছে। চেয়ার-টেবিল, ফার্নিচার নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পিডব্লিউডির প্রধান প্রকৌশলী এই কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য সদস্যদের জন্যও রাষ্ট্রীয় আবাসনগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে।
নতুন সরকারের প্রতিনিধিদের জন্য কতটি আবাসন সাজানো হচ্ছে জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম ভূঞা বলেন, “আমরা এখনও সবার নামের তালিকা পাইনি। আমরা অপেক্ষায় আছি। আগের মন্ত্রীদের যে বাংলোগুলো ছিল সেগুলোই প্রস্তুত করছি। আমাদেরকে ২০টি আবাসন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।”
ছাত্র জনতার বিপুল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সরকারের পতনের পর চার দিন ধরে সরকার নেই দেশে। সংবিধানে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না থাকলেও নতুন নির্বাচনের প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীও তাতে সমর্থন দিচ্ছে।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাতে সম্মতি দেন।
সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান রোববার বলেছেন, এ সরকারের উপদেষ্টা হতে পারে ১৫ জনের মত। বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ হবে।
দেশের পরিস্থিতি যখন টালমাটাল, অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে অধ্যাপক ইউনূস ছিলেন প্যারিসে। গত সরকারের সময়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে ৬ মাসের যে সাজা দেওয়া হয়েছিল, বুধবার তা বাতিল করেছে শ্রম আপিল আদালত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে প্যারিস থেকে দেশের পথে রওনা হয়েছেন ইউনূস। দুপুরে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।
বিমানবন্দর থেকে ইউনূস প্রথামে যাবেন মিরপুরের ইউনূস সেন্টারে। সামরিক প্রোটোকলে নিরাপত্তা দিয়ে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে তাকে সংবর্ধনা জানাবেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
দেশের পথে রওনা দেওয়ার আগে জাতির উদ্দেশে ইউনূস বলেন, “আসুন, আমরা আমাদের এই নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যব্যবহার নিশ্চিত করি। আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়।”