“আমরা যদি প্রথম দিক থেকে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ সরকার দ্বারা এত জুলুম, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হত না।”
Published : 23 Jan 2025, 02:44 PM
আওয়ামী লীগ আমলে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পেছনে ‘বিচার বিভাগেরও ভূমিকা ছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে এসে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজ আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে দেন।
শুনানির পর মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আশা করি, রায়ে আমি ন্যায়বিচার পাব। কারণ ফ্যাসিবাদের পতন ও বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে। ইতোপূর্বে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পক্ষে বিচার বিভাগের ভুমিকা রয়েছে। এটা বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে।
“পরবর্তীতে বিচার বিভাগের সহযোগিতায় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকানো গেছে। আমি আশাবাদী, আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব।”
২০২৩ সালের অগাস্টে এ মামলার রায়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বাকি তিনজন হলেন– জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
ক্ষমতার পালাবদলের পর আপিল করার শর্তে আদালত থেকে জামিন পান মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান।
শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয়ের গোপন তথ্যের জন্য এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে আট বছর আগে সিজারকে সাজা দেয় নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকার পল্টন থানায় এ মামলা দায়ের করে পুলিশ। সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, “এ মামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মামলা করা হয়েছে আমেরিকায় এবং ২০০৫ সালের পর আমি আমেরিকায় যাইনি। অথচ এ মামলার সময় দেখানো হচ্ছে ২০১২ সালে। সে সময় আমি আবার পত্রিকা অফিসে বন্দি ছিলাম। পত্রিকা অফিস পুলিশ, র্যাব ঘিরে রেখেছিল। এটাতে প্রমাণিত হল একটা রাষ্ট্র কতটা নির্মম হতে পারে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে।”
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, “শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমার দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসেবে আমার যে লড়াই, সেটা অব্যাহত থাকবে। এই মামলাটি হয়েছিল শেখ হাসিনার পুত্র নিয়ে, এমন শতাধিক মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে নিয়ে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এরকম একটি মামলাতেই আমার ওপর হামলা করা হয়েছিল৷ আমি আল্লাহর রহমতে জীবিত আসতে পেরেছি। তবে ধরে নিচ্ছি এই যে লড়াই, যতদিন জীবিত আছি এই লড়াই চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।”
মাহমুদুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণকে এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেন কোনো ফ্যাসিবাদি সরকারকে উঠতে দেওয়া না হয়। জনগণের প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করা উচিত।
“আমরা যদি প্রথম দিক থেকে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ সরকার দ্বারা এত জুলুম, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হত না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতাও দিল্লির কাছে বিসর্জন দিতে হত না। জণগণের কাছে আমার আহ্বান, আর কোনো ফ্যাসিবাদি সরকারকে দেশে জায়গায় দেবেন না। সকল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে।”