আগের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রশাসন ক্যাডারদের ‘অভূতপূর্ব ক্ষমতা ও সুবিধা’ দিয়েছিল অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।
Published : 29 Dec 2024, 01:05 AM
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে ‘দেশবিরোধী অপতৎপরতা’ আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ৪৮ নাগরিক।
শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে দেশ-বিদেশে বসবাসরত এসব ব্যক্তি বলেন, ''কিছুদিন ধরে আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে দেখতে পাচ্ছি যে, রাষ্ট্রের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের কাজে মনোনিবেশ না করে বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। তাদের এই কাজ আমাদের ফ্যাসিস্ট আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়।''
আগের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রশাসন ক্যাডারদের ‘অভূতপূর্ব ক্ষমতা ও সুবিধা’ দিয়েছিল অভিযোগ করে এতে বলা হয়, ''এর বিনিময়ে প্ৰশাসন ক্যাডার এবং পুলিশ সার্ভিস ছিল সেই স্বৈরাচারী সরকারের অবৈধ, অগণতান্ত্রিক পথে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রধানতম সহযোগীদের অন্যতম।
”এমনকি ৫ অগাস্টের পর পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব হাসিনার সরকারের দুঃশাসনের সহযোগী হিসেবে দ্বায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার থেকে এরকম কোনো ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, দ্বায় স্বীকারোক্তিও আসেনি। তাই পুরো দেশ যখন সংস্কারের পক্ষে তখন প্রশাসন ক্যাডাররা সংস্কার বন্ধ করার জন্য যেভাবে ন্যাক্কারজনকভাবে চেষ্টা করছে আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।''
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী গত ১৭ ডিসেম্বর এক সভায় 'পরীক্ষার মাধ্যমে' জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং এ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ তুলে ধরেন।
বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সংস্কার কমিশনের ওই সুপারিশের প্রতিবাদে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মকর্তারা।
পরে ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে প্রতিবাদ সভা করে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা কমিশনের সুপারিশকে ‘অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
উপসচিবের শতভাগ পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লে ‘সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান’ ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এমন প্রেক্ষাপটে এসব নাগরিক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, ''আমাদের ক্যাডাররা কখনই দেশের স্বার্থে এক না হয়ে সব সময় ক্ষমতা এবং সুবিধার জন্য একাট্টা হয়ে দেশকে জিম্মি করে কাজ আদায় করে।''
এরাই ১৯৯৬ এর জনতার মঞ্চ অথবা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর অবৈধ নির্বাচনের কারিগর বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
অর্থনীতির শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের আমলারা দুর্নীতিতে প্রথম এবং বেগম পাড়াতে বাড়ি করাতেও তারা সবার থেকে এগিয়ে। দুঃখের কথা এখন পর্যন্ত এই সরকার কারো বিচার না করে উপরন্তু অনেককে ‘বঞ্চিত’র ছুতোয় ভূতাপেক্ষা প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছে।
“যেহেতু কোন শাস্তির ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না, ক্যাডাররা জোট বেধে সরকারকে অচল করে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যা সরাসরি সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ৩০ ধারার লংঘন। আইন মতে তারা সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য।
”আমরা এই ব্যাপারে সরকারকে সকল প্রকার ইনডেমিনিটি বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা মোতাবেক যথাবিহীত তদন্ত করার অনুরোধ করছি। সচিবালয়ের আগুনের মধ্য দিয়ে কারা দুর্নীতির ডকুমেন্ট নষ্ট করে ফেলছে তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।''
বিবৃতিদাতারা হলেন
রুমি আহমেদ খান, জাহেদুর রহমান, ইমতিয়াজ মির্জা, শফিকুর রহমান, সাদিক মাহমুদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাফায়েত আহমাদ, সুবাইল বিন আলম, এহতেশাম হক, জিয়া হাসান, ফাহিম মাশরুর, সাদিক মাহবুব ইসলাম, জ্যোতি রহমান, রুশাদ ফরিদী, রন্টি চৌধুরী, মোঃ খান সোবায়েল বিন রফিক, মাহমুদুল খান আপেল, দিলশানা পারুল, তৌফিক জোয়ার্দার, মারজিয়া মিথিলা, মোঃ আদনান আরিফ সেলিম, কাজী তানভীর আহমেদ, মুনতাসির মামুন, মোঃ সাইফুল হোসেন, আসিফ ইকবাল, এম ফয়সাল রিয়াদ, খান মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম, হুমায়ূন কবির, মুরশিদ শালিন, শাকিল আহমেদ, মুহাম্মদ খালেদ হাসান, তৌকির আজিজ, এহতেশামুল হক, জিয়া হাসান সিদ্দিকী, উল্লাস জয়েদ, ফখরুল ইসলাম সেলিম, সৈয়দ সারোয়ার রশিদ, শেখ মোহাম্মদ জিলানী, মোঃ রাশেদ, আসাদ উল ইসলাম, সাবিন রহমান, শায়ান খান, আসিফ খান, রিদওয়ান আনাম, ইসলামুল হক, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুস্তাক আহমেদ, রুপম রাজ্জাক, আশরাফুল হাসান।
আরও পড়ুন...
পদোন্নতির কোটা: কমিশনের ভাবনায় 'ষড়যন্ত্র' দেখছে প্রশাসন ক্যাডার
প্রতিবেদন জমার পর প্রশাসন ক্যাডারে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না: সচিব
পদোন্নতিতে কোটা কমানোর প্রস্তাবে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের