সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, কোটা থাকবে কি থাকবে না, যদিও সেটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, তথাপি এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
Published : 21 Jul 2024, 02:12 PM
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা বাতিল করে কোটার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৯৩ শতাংশ পদে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। সরকারের নির্বাহী বিভাগ অবিলম্বে গেজেট জারি করে এই নির্দেশনা কার্যকর করবে।
রাষ্ট্রপক্ষ এবং আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থীর করা লিভ টু আপিলের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রোববার এ রায় দেয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদিও কোটা নির্ধারণের বিষয়টি রাষ্ট্রের পলিসি ম্যাটার বা নীতি নির্ধারণী বিষয়, তথাপিও অত্র আদালত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত এখতিয়ার বলে এবং সার্বিক ও যৌক্তিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ ন্যায় বিচারের স্বার্থে সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮(৪), ২৯(১) ও ২৯(৩) অনুচ্ছেদে বিধৃত সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য” কোটার এই হার নির্ধারণ করল।
এ রায়ের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারের জারি করা পরিপত্রও স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে গেল।
রায়ে বলা হয়, “এই নির্দেশনা ও আদেশ প্রদান সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় এই আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।”
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সহিংস রূপ পাওয়ার পর নজিরবিহীন নৈরাজ্য আর শতাধিক মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে জারি করা কারফিউয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।
ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়া ছিল তাদের মূল দাবি।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের অনুশাসন দেন। পরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল থাকে।
এক রিট আবেদনে হাই কোর্ট সেই পরিপত্র বাতিল করে কোটা পুনর্বহালের রায় দিলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়, যা পরে ব্যাপক সহিংসতার রূপ নেয়। রাষ্ট্রপক্ষ এবং কোটাবিরোধী দুজন শিক্ষার্থী হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে আসে।
শুনানিতে যা হল
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন হাই কোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আবেদন করেছিলেন, তিনি নির্বাহী বিভাগকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়ার রায় চেয়েছিলেন। তাকে ছাড়া মোট নয়জন আইনজীবীকে এদিন আদালত শুনেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রিটকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।
শুনানিতে কোটা বিষয়ে অ্যামিচি কিউরি হিসেবে মতামত দেওয়ার জন্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেয় আদালত। তারা হলেন– হাসান আরিফ, এহসানুল করীম, জেড আই খান পান্না, তানিয়া আমীর, তানজিব উল আলম, সারা হোসেন।
এছাড়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং মাহবুবউদ্দিন খোকন এবং ইউনুস আলী আকন্দ আদালতের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এক ঘণ্টা শুনানি করেন। তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায় ‘পরস্পরবিরোধী’। কারণ এক জায়গায় কোটা পুনর্বহালের কথা বলা হয়েছে, আরেক জায়গায় আবার সরকারকে কোটার হার পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের পলিসির ওপর ভিত্তি করে কোটা সংরক্ষণের আগের সিদ্ধান্ত এসেছিল, সেই বাস্তবতা আর নেই।
দুই ছাত্রের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, হাই কোর্টের রায় বাতিল হোক, কোটার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিক।
রিটকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর বিবেচনায় কোটা দেওয়া হোক।
প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী চিহ্নিত, সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা নেই। মেধার বিবেচানায় কেউ কি অগ্রসর বা অনগ্রসর হতে পারে?
“২০২১ সালে রুল হওয়ার পর আপানারা কোনো কথা বলেননি। ২০১৮ সালে সরকার বাতিল করেছে, তখনও আপনারা কোনো দেন দরবার করেননি। আপনারা চাইলে সরকারের কাছে যেতে পারতেন। এখন হাই কোর্ট রায় দিয়েছে, সেখানে সরকারের পলিসি নিয়ে কথা আছে। দেশের সিচুয়েশনটা সবাই জানে।
“২০১৮ সালে কোটাকে বৈষম্যের কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর। তারপর প্রধানমন্ত্রী সেটা বাতিল করেন।”
অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, সরকারের নীতিগত বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
এহসানুল করীম বলেন, “জনগণের চাহিদা কেমন, সেটা সরকার বোঝে। সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাকওয়ার্ড হতেই পারে না। তারা বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। কোনো প্রয়োজন নেই চিন্তা করেই সরকার কোটা তুলে দিয়েছে। বাতিল করে দেওয়াটা সংস্কার, আবার ফিরিয়ে আনাটাও সংস্কার। প্রযাজন মনে করলে আবার নিয়ে আসবে।”
তানিয়া আমীর বলেন, “প্রশ্নটা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের নিয়ে। যাদের জন্ম হয়নি এখনও, তারা কীভাবে অনগ্রসর? মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর নন। তাদের কেন অবমাননা করছি অনগ্রসর বলে? নাতিপুতিদের আলাদা ক্লাসিফিকেশন কি যৌক্তিক?
“আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোটা একটা সাময়িক পদক্ষেপ। কোন পর্যায়ে কতদিন চলবে সেটা ঠিক করা হয়। আমার সাবমিশন হল, এই রিট চলতে পারে না।”
জেড আই খান পান্না বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা চান সম্মান, তাদের তালিকা সঠিকভাবে করা প্রয়োজন।”
সারা হোসেন বলেন, অনগ্রসরদের জন্য কোটা থকতে পারে, তবে কারা অনগ্রসর সেটা আগে ঠিক করতে হবে।
“গত কয়েক দিনে যতগুলো লাশ পড়েছে, সেটার কী হবে? ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ বিবেচনায় অগ্রসর অনগ্রসর ঠিক করতে হবে। বৈষম্য করলে হবে না।”
অ্যাডভোকেট মাহবুবউদ্দীন খোকন বলেন, “রায় যেদিকে যাচ্ছে, সেটা করার জন্য এতগুলো মানুষের প্রাণহানির কোনো প্রয়োজন ছিল না।”
প্রেক্ষাপট
শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির সব কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে। সেই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় গত ৫ জুন।
এরপর জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও পরে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও পরে তাদের দাবি এক দফায় এসে ঠেকে। তাদের দাবিতে বলা হয়, সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করতে হবে৷
এর মধ্যে ১০ জুলাই আপিল বিভাগ বিভাগ হাই কোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেয়। কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত সেদিন বলে, কোটা নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে।
পরদিন হাই কোর্টের রায়ের অপারেটিভ বা বাস্তবায়নের অংশ প্রকাশিত হয়। তিন দিন পর ১৪ জুলাই প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।
২৭ পৃষ্ঠার সেই রায়ে বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে যে ২০১৮ সালে যে পরিপত্র সরকার জারি করেছিল, তা ‘অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য যে কোটা সরকার বাতিল করেছিল, তা পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে। সেই সঙ্গে জেলা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিগোষ্ঠীর জন্যও কোটা বহাল করতে হবে।
এই রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোটা পুনর্বহালে আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত।
সেই সঙ্গে হাই কোর্ট বলে, সরকার যদি ওইসব কোটার শতকরা হার বা অনুপাত বাড়াতে, কমাতে বা পরিবর্তন করতে চায়, এই রায় সেক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না।
পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোনো নির্ধারিত কোটা পূরণ না হলে সরকার মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে সেই পদ পূরণ করতে পারবে।ৎ
এদিকে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার আদেশের পরও আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
সেদিন প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্য ঘিরে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করলে এ আন্দোলন সহিংস রূপ পায়।
১৬ জুলাই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে তাদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাধে। তাতে প্রাণ যায় ছয়জনের। পারদিনও বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়। সরকার সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়।
১৭ জুলাই সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সাথে সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।”
তিনি দেশজুড়ে সংঘাতের বিচারবিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনকারীদের বলেন, সেখানে ছাত্রসমাজ ন্যায়বিচার পাবে বলেই তার বিশ্বাস।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘শাটডাউনের’ ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের এ কর্মসূচিতে প্রায় অচল হয়ে পড়ে সারা দেশ। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে প্রাণ যায় অন্তত ৪১ জনের।
সেদিন দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে এসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আন্দোলনকারীরা যখন চাইবে, তখনই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার প্রস্তুত। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে একমত। কোটা নিয়ে পরিপত্র বাতিলের হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার যে আপিল করেছে, তার শুনানি এগিয়ে আনা হয়েছে রোবাবর।
পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, গত কয়েক দিনের সংঘাত ও প্রাণহানির সার্বিক ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতেও প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রীর ওপর ব্রিফিংয়ের পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে না সরলে রাজধানীতে চলতে থাকে নজিরবিহীন নৈরাজ্য। বিটিভি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, সেতু ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়, পোড়ানো হয় কয়েকশ যানবাহন। বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলতে থাকে।
তবে যাদের এসব সংঘাতে দেখা গেছে, তাদের ছাত্র বলে মনে হয়নি প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের। অনেকেই বলেছেন, আন্দোলনের সুযোগে তৃতীয়পক্ষ ঢুকে পড়ে নাশকতায় জড়িয়েছে বলে তাদের ধারণা।
সরকারের তরফ থেকেও একই ধরনের কথা বলা হয়। এই নৈরাজ্যের জন্য সরাসরিই বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বক্তব্য দেন সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
এদিকে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ১৭ জুলাই রাতে। পরদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ।
১৮ জুলাই দিনরাত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘাতে প্রাণ যায় অন্তত ৭৫ জনের। সেদিন রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী নামানো হয়। এরপরও ২০ জুলাই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসত চলে। তাতে আরো অন্তত ২৬ জনের প্রাণ যায়।
এই পরিস্থিতিতে কারফিউয়ের মধ্যেই রোববার সকালে আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা শুনানির পর সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের রায় বাতিল করে কোটা ব্যবস্থার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দিল।