মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বদিউল আলম ও নিচতলায় ইশতিয়াক মাহমুদ বসবাস করেন। দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলমান।
Published : 05 Oct 2023, 06:25 PM
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলার বাদী বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক ইশতিয়াক মাহমুদ গ্রেপ্তারের পরের দিনই জামিন পেয়েছেন।
বৃহষ্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম নূরুল হুদা চৌধুরি শুনানি নিয়ে তাকে জামিন দেন।
তার এই আদেশের কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক এশারত আলী।
বুধবার ইশতিয়াককে মোহাম্মদপুরের খিলজী রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন তাকে আদালতে তোলার পর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে বদিউলের শ্যালকের আইনজীবী করেন জামিনের আবেদন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন বিচারক।
পাঁচ বছর আগের ঘটনায় বদিউল আলম মজুমদার যে মামলা করেছিলেন, তাতে তিনি আসামি হিসেবে শ্যালকের নাম দেননি। পরে পুলিশ আদালতে যে প্রতিবেদন দেয়, তাতে তিনি নারাজি দেন। সম্প্রতি পুলিশ শ্যালক ইশতিয়াকসহ ৯ জনের নামে প্রতিবেদন দিলে বদিউল সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম জাকী আল ফারাবী অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ইশতিয়াক মাহমুদকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন। পাশাপাশি গ্রেপ্তারের বিষয়ে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।
ওই রাতেই মোহাম্মদপুরের খিলজী রোডে ইশতিয়াকের অফিসের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল।
কী ঘটেছিল
২০১৮ সালে ৪ অগাস্ট রাতে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে নৈশভোজে গিয়েছিলেন বার্নিকাট। ওই ভোজে গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজন ছিলেন।
সেখানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় একদল নেতা-কর্মী বাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। তারা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এরপর ১০ অগাস্ট বদিউল আলম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন, সেখানে তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি পেয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন।
হামলাকারীরা সেদিন মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন এবং এরপর বাড়ির প্রধান ফটক ধাক্কাধাক্কি করে ভয়-ভীতি দেখান বলে মামলায় উল্লেখ করেন তিনি।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আব্দুর রউফ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
২০২২ সালের ২৮ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ৪ ডিসেম্বর ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। কিন্তু বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার জবানবন্দিতে ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেন।
এরপর ২৭ ডিসেম্বর আদালত অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠান।
এরপর ওই মামলার তদন্ত করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রাজন সাহা। এতে ইশতিয়াক মাহমুদকে আসামি করা হয়।
একই বাড়ির ওপর ও নিচতলায় বাস বদিউল ও ইশতিয়াকের
সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বদিউল আলম ও নিচতলায় ইশতিয়াক মাহমুদ বসবাস করেন। তবে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলমান।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার দিন রাতে বাদীর বাড়িতে বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করেন বদিউল আলম। বাদীর বাসায় বার্নিকাট, ড. কামাল হোসেন, হাজিফ উদ্দিনসহ (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা অংশ নেন।
কিন্তু সেখানে নৈশভোজের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মোহাম্মদ ইশতিয়াক মাহমুদ, ফিরোজ মাহমুদ, নাইমুল হাসান রাসেল, মীর আমজাদ হোসেন আকাশ, মো. সাজু ইসলাম সাজু, রাজিবুল ইসলাম রাজু, মুহাম্মদ শহীদুল আলম খান কাজল, সিয়াম, অলি আহম্মেদ জনি, মোহাম্মদ মুজাহিদ আজমী তান্নাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জন বাদীর বাড়িতে হামলা করেন।
এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে বার্নিকাটের গাড়িবহর ধাওয়া করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। কিন্তু বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে আসামিরা বাদীর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন এবং বাদী, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহাবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেন।
পরে বাদীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলেও সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।