“তারা নানাভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তাদের নেটওয়ার্ক এখন অনেক বিস্মৃত।”
Published : 01 Aug 2024, 11:55 PM
মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করার পর থেকেই জোরাল ছিল তাদের নিষিদ্ধের দাবি।
৪৫ বছর পর সেই দাবি পূরণ হলেও এখনো আরো অনেক কিছু করার বাকি বলে মত উঠে এসেছে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার থাকা রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন আর মুক্তিযোদ্ধাদের তরফে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী দলটির বিচারের দাবিও তুলেছেন তারা।
এই ৪৫ বছরে জামায়াত কেবল রাজনীতিতে নয়, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে যেভাবে ছড়িয়েছে, সেগুলোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করার ১০ দিনের মধ্যেই তাদেরকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয় ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ আখ্যা দিয়ে।
সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘জনআকাঙ্ক্ষার পূরণ’ হিসাবে দেখছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
একাত্তরে শহীদ পরিবারের সন্তান শাওন মাহমুদের কাছে এই পদক্ষেপ হচ্ছে ‘দীর্ঘদিন উপেক্ষিত দাবির’ বাস্তবায়ন।
মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম বলছে, “দলটিকে নিষিদ্ধ করাই শেষ কথা নয়। বাংলাদেশকে সুস্থ গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের প্রগতিশীল ধারায় পরিচালিত করতে সরকার, গণসংগঠন ও সাংস্কৃতিক সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুনর্জাগরণ প্রয়োজন।”
তদন্ত করে জামায়াতের বিশাল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিপদে পড়া দেশবাসীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জামায়াত নেতা গোলাম আযম ছুটে যান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খানের কাছে। এর আগে তিনি জাতির উদ্দেশে রেডিও ভাষণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে যে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়, তার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামায়াত নেতা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, যে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, সেটির প্রধান নেতা ছিলেন প্রথমে সে সময়ের ইসলামী ছাত্রসংঘের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও পরে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ।
স্বাধীনতার পর জামায়াত আর বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। তবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হওয়ার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়।
১৯৭৬ সালে জামায়াত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লিগ নামে মোর্চা গঠন করে রাজনীতিতে ফেরে। তিন বছর পর ১৯৭৯ সালের ২৭ মে নিজ নামে সংগঠনের ঘোষণা দেয়।
তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দল ও সংগঠন জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তুলতে থাকে।
২০১০ সালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের একাধিক রায়ে জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল সংগঠন’ বলার পর দল হিসেবে তার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। পরের বছর তদন্ত প্রতিবেদনও জমা পড়ে ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু সংগঠনের সাজা কী হবে, সেটি আইনে উল্লেখ না থাকায় বিচার আর করা যায়নি। আইন সংশোধনের কথা বলা হলেও এক দশকেও তা করা হয়নি।
অবশ্য আদালতের রায়ে আগেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হারিয়েছিল একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি।
সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট হাই কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ‘অবৈধ ও বাতিল’ ঘোষণা করে রায় দেয়। গতবছর সর্বোচ্চ আদালতেও হাই কোর্টের ওই রায় বহাল থাকে। এর পলে দলটি দলীয়ভাবে নির্বাচন করার যোগ্যতা হারায়। অবশ্য ২০১৮ সালে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে দলটির নেতারা ভোটে আসেন।
বিচার না হওয়া পোড়ায়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘকাল যে দাবিটি বাংলার মানুষ করেছিলেন যে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের; অন্তত সেই দিকে হলেও দেশের একটি বিশাল সংকটকালে সেই জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়। বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবেই এটি থাকবে।”
তবে জামায়াতের বিচারের দাবি পূরণ না হওয়াটা পোড়ায় এই আইনজীবীকে। তিনি বলেন, “জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম মামলায় দলটিকে ‘অপরাধকারী সংগঠন’ বলা হয়েছিল। অন্য অনেক রায়ের পর্যবেক্ষণে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের অভিমতগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
“অন্তত আজকের দিনেও এসে যে ট্রাইব্যুনালের অভিমতগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বাস্তবায়িত হল, আমি মনে করি যে, এর ফলে দেশ প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক ধারায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিয়ে একটা পথ প্রশস্ত হল।”
নিষিদ্ধ ঘোষণার পরের পদক্ষেপ কী হতে পারে, এমন প্রশ্নে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, “জামায়াতে অধীনে থাকা সব সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এখন সরকারের আওতাধীনে এগুলোকে নিয়ে আসা, তার সব ব্যবস্থা এর পথ ধরে পড়বে। এখন সেখানে সরকার কী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে, এখন সেটা হচ্ছে দেখার বিষয়।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগও জামায়াতকে ব্যবহার করেছে, বিএনপিও ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগ এতদিন জামায়াতে ইসলামকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল, যখন দেখা গেল যে, ‘জামায়াতকে তাদের কাজে লাগছে না’, তখন ছুঁড়ে ফেলে দিল।”
গণহত্যা জাদুঘরের এই ট্রাস্টি সম্পাদক বলছেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দলটিকে নিষেধ করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ অনেক আগে নিতে পারত, নিলে আজকে যে দিনগুলো আমরা দেখতেছি এগুলো আমাদের দেখতে হত না।”
‘ধ্বংস করতে হবে অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক’
জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির আদ্যোপান্ত বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
“একাত্তরে তারা যে গণহত্যা করেছে, সে কারণেই তো তাদের অনেকে আগেই নিষিদ্ধ করে বিচারের আওতায় আনা উচিত ছিল। কেন রাজাকার হিসেবে তাদের ভূমিকার জন্য বিচারটা হল না? সেটি হলে তো এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতির সুযোগ তারা পেত না”, বলেন তিনি।
জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই সাংবাদিক বলেন, “তারা নানাভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তাদের নেটওয়ার্ক এখন অনেক বিস্মৃত। ফলে জামায়াতকে এখন কেবল সাংগঠনিক রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করলেই যে তারা শেষ হয়ে যাবে, তা নয়। জামায়াতের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারেও ভাবতে হবে।”
জামায়াত তাদের অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে ব্যবহার করে- অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে বলেও জানান নির্মূল কমিটির এই নেতা।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে সোচ্চার হওয়া সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও এক বিবৃতিতে একই ধরনের মত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আজ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ, তাতে এই যুদ্ধাপরাধী দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধই যথেষ্ট নয়। গণজাগরণ মঞ্চের ছয়দফার অন্যতম আরেকটি দাবি ছিল এই সংগঠনের গড়ে তোলা মৌলবাদের অর্থনীতির যে বিশাল সাম্রাজ্য, সে বিষয়ে তদন্ত করা।”
‘আত্মতুষ্টির কিছু নেই’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে ‘আত্মতুষ্টিতে’ না ভোগার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পরও তারা নিষিদ্ধ ছিল, পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায়ও অনুপ্রবেশ করেছে। তারা কীভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ঢুকে সাম্প্রদায়িকতা বিষ ছড়াতে চাইছে, তা তো দেখেছি। আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে তাদের প্রভাব তৈরি হয়েছে।”
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদী জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় ছাত্র জনতার দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের বিজয়।”
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম বলেছে, “জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, বরং প্রতিরোধ করেছে, এবং গত ৫৩ বছরেও তার নীতি আদর্শের পরিবর্তন ঘটেনি। কাজেই এই নিষিদ্ধকরণ ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি।
“আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগেই দলটিকে যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে অভিহিত করেছে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের ছত্রছায়ায় সংগঠন দুটি ব্যাপক নৈরাজ্য ও সহিংসতার যুক্ত ছিল বলে সরকার অভিযোগ করেছে।”
শহীদদের সন্তানদের ভাবনা
শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো বহু বছর ধরেই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি করে আসছি। আমাদের দাবিটি এতদিন উপেক্ষিতই থেকেছে বা আমাদের দাবিটিকে এক ধরনের অবজ্ঞা করা হয়েছে। দেরিতে হলেও সরকার এবার সেটি করেছে, এজন্য ধন্যবাদ জানাই।
“তবে যে সময়ে এসে সরকার এটি করেছে, সেখানে তার বাস্তবায়ন করাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের হবে। আশা করি সরকারের সেই প্রস্তুতিও রয়েছে। এই নিষিদ্ধ যেন শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই না থাকে।”
প্রয়োজনে বিশেষ আইন তৈরি করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক ধারায় ফেরার তাগিদ দিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এই সাধারণ সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দেখেছি, হেফাজতে ইসলামও সরকারের বিশেষ মহলের সহানুভূতি নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষ ছড়াচ্ছে। সেটিও ভাবতে হবে।”
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি ‘কেবল শুরু’ মন্তব্য করে আসিফ মুনীর বলেন, “আমরা আশা করব, ধাপে ধাপে সরকার জামায়াতকে বা তাদের ভাবাদর্শের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য সরকার নানাভাবে উদ্যোগ নেবে।”
ক্ষমতাসীন দলেও জামায়াত-শিবিরের ভাবাদর্শের মানুষ রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ফলে সংগঠনকে বা জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই যে তাদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে, তা নয়।”
এখন কি সঠিক সময়?
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রত্যাশা জাতির অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে নিষিদ্ধ করার সঠিক সময় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে তার মধ্যে।
তিনি বলেন, “কেননা স্বাধীনতার পরেই বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরেই জামায়াত এবং শিবিরের যে ঘটনাক্রমগুলো আমরা দেখেছি সে ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল। সুতরাং সেই প্রেক্ষিতে ওই রকম একটি সংগঠন রাজনীতি করতে পারে সেটা বাংলাদেশের সংবিধান সমর্থন করতে পারে না। সাংবিধানিক ভাবেই এটাকে অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা তখন করা হয়নি।
“ঠিক এ সময়ে এটা কতটা সময়ের প্রয়োজনে করা হলো এটা ভাবতে অনেক প্রশ্নের উদ্রেগ করে দেয়। সিদ্ধান্ত সঠিক কিন্তু সময়টা যৌক্তিক না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো বক্তব্য নেই। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে ছিল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, কিন্তু আওয়ামী লীগ তো সেটা করেনি, এখনও করবে বলে আমার মনে হয় না। এখনও তারা অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে রাখবে কিন্তু জামায়াতকে বেআইনি করবে।
“শুধু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে হবে না, শিক্ষা ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, উৎসব আয়োজন- সর্বক্ষেত্রে ধর্মের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। কিন্তু ধর্ম পালনের ব্যক্তিগত অধিকার থাকবে, যে কোনো সেক্যুলার দেশে সেটা থাকে।”
সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে মত দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, “আমাদের যে প্রজন্মগুলো বিভ্রান্ত হয়েছে তাদের অস্তিত্বের কারণে, আমার মনে হয় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন কতটুকু ক্ষতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব আমি জানি না।”
জামায়াতের সদস্যদেরও ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে তালিকাভুক্তির দাবি
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
বৃহস্পতিবার রাতে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান।
দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাসদ সভাপতি ও সম্পাদক।
তারা বলেন, "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কতৃর্ক ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরোধী অপরাধে দায়ী ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় ছাত্র জনতার দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের বিজয়।"
বিজ্ঞপ্তিতে তারা জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার অংশ হিসাবেই তাদের সংগঠনের সকল পর্যায়ের সদস্যদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানান।