অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের আবেদনে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 06 Jun 2024, 04:21 PM
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তের মুখে থাকা পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা সাভার, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের সম্পত্তি দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসক নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন বলে দুদকের বিশেষ কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের জানান।
বেনজীরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের আবেদনে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দেয় আদালত।
সম্পত্তি দেখভালের জন্য মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক, সাভারের ইউএনও ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসককে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বেনজীরের গোপালগঞ্জের মৎস্য খামারের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে।
গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় ঢাকা, সাভার, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের রাজৈরে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা শত শত একর জমিসহ সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় একই আদালত। ওই সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য ‘রিসিভার’ নিয়োগের আবেদন করা হয়।
২৬ মে ১১৯টি দলিলের সম্পত্তি ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ আসে। বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ার ও সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করারও আদেশ দেয় আদালত। মাদারীপুরের রাজৈর থানায় ১১৪টি দলিলের শত শত বিঘা জমি, সাভারের বেশ কয়েকটি জমি, বেনজীর পরিবারের সাভানা এগ্রো লিমিটেড, সাভানা ইকো রিসোর্ট, একটি শিশিরবিন্দু নামে আরেকটি কোম্পানির সব সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্রের ৩০ লাখ টাকা, শান্তা ও লঙ্কাবাংলায় বেনজীর পরিবারের শেয়ার ও আরও ১৫টি কোম্পানিতে বেনজীর পরিবারের বিভিন্নজনের নামে আংশিক শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
এসব সম্পত্তি বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে রয়েছে। গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটের প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে আবেদন করা হলেও আদালত পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও তথ্য দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরে আদেশ দেওয়া হবে।
গত ৩১ মার্চ 'বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ' ও ৩ এপ্রিল 'বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট' শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন। এরপর ২২ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা। সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ। নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আটটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক। দুদকের আবেদনে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে নোটিস পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার জন্য বুধবার আইনজীবীবর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করেন বেনজীর। তার স্ত্রী-সন্তানদের ৯ জুন জিজ্ঞাসবাদের জন্য দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
পুরনো খবর-
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে সময় চান বেনজীর
ব্যবস্থা নিন, নইলে 'অন্য বেনজীররা' আশকারা পাবেন: সংসদে চুন্নু