Published : 30 Apr 2025, 06:40 PM
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনী আইন-বিধি সংশ্লিষ্ট সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য এসব সুপারিশ বুধবারই সরকারের কাছে পাঠাচ্ছে কমিশন।
এদিন সকালে চতুর্থ কমিশন সভার পর নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এটা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইনশাহআল্লাহ, আজকের মধ্যে পাঠিয়ে দেব।”
মার্চের মাঝামাঝি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্য থেকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো’ ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ নির্ধারিত ছকে পাঠাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুরোধ করেছিল।
রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়গুলোতে একমত হবে সেগুলো নিয়ে কমিশনের কোনো দ্বিমত নেই বলে মন্তব্য করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সঙ্গে ভিন্নমত ছিল নির্বাচন কমিশনের। ১৮ মার্চ দ্বিমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়।
পরে সরকারের তরফ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার রাজনৈতিক ঐকমত্য, আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে ভোটের আগে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আইন সংশোধন করা সম্ভব এমন বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “মোটাদাগে বলা যায়- যেসব বিষয়গুলোতে শুধুশাত্র আরপিও এর সামান্য সংশোধন করে করা সম্ভব এবং আর্থিক সংশ্লেষ নেই (সেগুলো সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে)।
“কিছু বিষয় রয়েছে রাজনৈতিক; রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে আশু বাস্তবায়নযোগ্য। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয় রয়েছে সেগুলোতে আমরা মতামত দেয়নি। নির্বাচনী আইন সংস্কার প্রস্তাবে যেগুলো সরাসরি ইসি সম্পৃক্তও আর্থিক সংশ্লেষ নেই, এমন ১০-১২টি সুপারিশ রয়েছে।”
‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সংস্কার সুপারিশে তিন ধরন
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “এখানে তিন ধরনের ক্যাটাগরি ছিল। একটা হচ্ছে আশু বাস্তবায়নযোগ্য। এটার হয়ত রাজনৈতিক কোনো বিতর্কের কিছু নেই, আলোচনা বা সহমত পোষণের কিছু নেই। সেগুলো আমরা (অনুমোদন) দিয়ে দিয়েছি।”
যেসব সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য সম্পৃক্ত, সেগুলো এড়িয়ে গেছে কমিশন।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ যেগুলোতে মনে হয়েছে পলিটিক্যাল ঐকমত্যের বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করিনি। আর যেসব সুপারিশের বিষয়ে আমরা মতামত পূর্বে দিয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে বলেছি, এটার ব্যাপারে আগে মতামত দিয়েছি।”
যেসব বিষয়ে প্রস্তাব চেয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ
‘আশু বাস্তাবায়নযোগ্য’ সুপারিশগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের নয়টি বিষয় রয়েছে। এগুলো হল- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সংশোধন), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (সংশোধন), নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক) পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ (অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী), পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সানাউল্লাহ বলেন, “এখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে- যে বিষয়গুলো মন্ত্রণালয় তালিকাভুক্ত করে আমাদের পাঠিয়েছে, এসবের মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য। এরমধ্যে কিছু আছে নির্বাচন কমিশন নিজেই বাস্তবায়ন করবে। বিধি সংশ্লিষ্ট যেগুলো, তা নিয়ে অবজারভেশন দেওয়ার কিছু নেই, আইন ঠিক হলে বিধি করা যাবে।”
বিশেষ করে আইনের বিষয়ে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ প্রস্তাব চূড়ান্ত করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, বলেন তিনি।
“আমরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কাজ সম্পন্ন হয়েছে চূড়ান্ত করে এখন পাঠাবো।”
‘খুঁটিনাটি সব দেখে’ প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে ইসি
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “সুপারিশগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে দেখেছি। একটা একটা শব্দ দেখেছি, আশু বাস্তবায়নযোগ্য বলা হচ্ছে কথাটা। আবার এখানে এমন কোনো উপাদান আছে কি না, আর্থিক সংশ্লেষ, আইনি ব্যাপার রয়েছে ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয় রয়েছে কি না।”
কী কী প্রস্তাব ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ইতোমধ্যে নির্বাচনী আইনে সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় নতুন দফা, হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়া, রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, নির্বাচনী অপরাধের মামলা, মনোনয়নপত্র জমার সময় নির্ধারণ, প্রচারের সময় নির্ধারণ, দল নিবন্ধন বিধিসহ ছোটখাটো সংযোজনের প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করেছে।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “সুনির্দিষ্ট করে সব বলা সম্ভব নয়। ব্যালট পেপারে জলছাপের কথা (সুপারিশ)। এর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। তাই এটা আমরা আশু বাস্তবায়নযোগ্য মনে করি না।”
সচিব বলেন, “যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন এবং আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এই বিষয়গুলো বাদে অন্যগুলো নিয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে।”
পুরনো খবর:
আরপিও-আচরণবিধিতে কী সংস্কার চায় ইসি
পাঁচ কমিশনের 'আশু বাস্তবায়নযোগ্য' ১২১ সুপারিশ, দ্রুত তালিকা চায় সরকার
আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে 'কাজ করছে' ইসি
ডিসেম্বরে ভোট ধরে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে ইসি
সংস্কার কমিশনের ৩ সুপারিশে সিইসির আপত্তি, বললেন স্বাধীনতা 'খর্ব হবে'