Published : 30 Apr 2025, 11:38 PM
ঢাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদকে ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও আসামি করা হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মনিরুল ইসলাম বুধবার অভিযোগটি গ্রহণ করে শাহবাগ থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২০ মার্চ সে শিক্ষার্থীর পক্ষে ছাত্রদলের সাবেক নেতা এম এ হাশেম রাজু আদালতে এ মামলার আবেদন করেন।
তার আইনজীবী এবিএম জোবায়ের বলেন, সে দিন আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় আর কোনো মামলা আছে কি না, সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
আইনজীবী বলেন, শাহবাগ থানায় কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর আদালতের আদেশ এল।
মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নুর তাপস, ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মসিউর রহমান, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার।
আসামি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষকও আছেন আসামির তালিকায়। তারা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন অর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল ও অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মীজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল মান্নান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অনুপম সেন।
আসামিদের মধ্যে ১৫ জন সাংবাদিকও রয়েছেন। এরা হলেন- নাঈমুল ইসলাম খান, সুভাষ সিংহ রায়, নঈম নিজাম, শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল হক বাবু, আলমগীর হোসেন, আবেদ খান, সন্তোষ শর্মা, মাসুদা ভাট্টি, মিথিলা ফারজানা চৌধুরী, ফারজানা রুপা, মুন্নী সাহা, ফরিদা ইয়াসমিন, আবুল খায়ের চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে আছেন- সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস, রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, অরুণা বিশ্বাস, চঞ্চল চৌধুরী, জ্যোতিকা জ্যোতি, শামীমা তুষ্টি, শমী কায়সার, সাজু খাদেম, আশনা হাবীব ভাবনা, সোহানা সাবা, মামুনুর রশীদ, জায়েদ খান, রোকেয়া প্রাচী।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে গত ৪ অগাস্ট সকাল সাড়ে ১১টায় মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজুর নেতৃত্বে একটি মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পরীবাগ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের মোড়ে এসে পৌঁছায়। তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের পথ রোধ করে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ, হাতবোমা, পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, পিপার স্প্রে ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ গুলিতে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তখন তাকে অজ্ঞাতনামা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ সদস্যরা মারধর করে।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ‘হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও গণহত্যার’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এর বাইরেও কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর বিরুদ্ধেও।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, আন্দোলনে সংহিতার ঘটনায় ১৫০০ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ হত্যা মামলা।