Published : 02 May 2025, 12:54 AM
শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুলনায় মামলা হয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) ফারজুন ইসলাম বাদী হয়ে বুধবার তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
এতে বহুজাতিক সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো (বিএটি) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিশা আব্রাহাম, হেড অব অপারেশনস জর্জ লুইস মাসেডো, কোম্পানি সচিব ও সিনিয়র লিগ্যাল কাউন্সেল সৈয়দ আফজাল হোসেন ও কুষ্টিয়া লিফ ফ্যাক্টরির প্ল্যান্ট ম্যানেজার মুকিত আহমেদ চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়েছে।
শ্রমিকদের দাবি নিয়ে সমঝোতা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর খুলনার শ্রম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার তথ্য দিয়ে শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) ফারজুন ইসলাম বলেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত অক্টোবরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২২ দফা সুপারিশ বিএটি বাংলাদেশের কারখানা কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন না করায় দেশের প্রচলিত বিধিবিধান ও আইন লঙ্ঘিত হওয়ায় আইনি প্রতিকার চেয়ে এ মামলা করা হয়।
মামলার আগের দিন মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিএটি বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা বৈঠক ভেস্তে যায়।
‘নির্ধারিত সময়ে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায়’ কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে করে আসছেন কুষ্টিয়ায় বিএটি বাংলাদেশের কারখানার মৌসুমী শ্রমিকরা।
কারখানা ঘেরাওয়ের পাশাপাশি গত ২৩ এপ্রিল থেকে তারা মানববন্ধন, মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ২০১২ থেকে কোম্পানির পাওনা মুনাফা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, এক ও অভিন্ন নিয়োগপত্র, আইন বহির্ভূতভাবে ছাঁটাই করা শ্রমিকদের চাকরিতে পুর্নবহালসহ ২২ দফা বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন।
কুষ্টিয়ার সংশ্লিষ্ট কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক মুনছুর বিল্লাস বলেন, ২০২৪ সালে অক্টোবরে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমন্বিত সভার সিদ্ধান্ত মেনে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে বিএটি বাংলাদেশকে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তা না মানার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানিটি সমস্যা সমাধানে ‘আন্তরিক উদ্যোগ’ না নেওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ২২ সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগপত্র না দেওয়া, বিনা কারনে শ্রমিক ছাঁটাই, বকেয়া পাওনা পরিশোধ, ঝুঁকি ভাতা দেওয়াসহ শ্রমিক বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সময় ঠিক করে দেওয়া হয়।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বিএটি বাংলাদেশের একজন মুখপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আনুষ্ঠানিক আইনি নোটিস পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে আইনি প্রয়োজনীয়তা অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন তারা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট শ্রম আদালত ও উচ্চ আদালতের রায়ে শ্রমিকদের ন্যায় সঙ্গত দাবি মেনে নেওয়ার নির্দেশনাও মানছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। উল্টো ‘অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য’ আদালতে উপস্থাপন করে তাদের নেওয়া আইনি গ্যারাকলের মাধ্যমে বিএটি কর্তৃপক্ষ দিনের পর দিন শ্রমিকদের হয়রানি করছে।
মঙ্গলবারের সমঝোতা বৈঠকে কোনো সমাধান না হওয়ার তথ্য তুলে ধরে কুষ্টিয়ার ডিসি বলেন, বিএটি কর্তৃপক্ষ এবং কারখানার মৌসুমী শ্রমিকদের মধ্যে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটার একটা শান্তিপূর্ণ সুরাহার সমঝোতা সভা সমাধান ছাড়াই শেষ হয়।
“যেহেতু এখানে আইন কানুন বিধিবিধান মানা না মানার প্রশ্ন এসেছে, সে কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সর্বশেষ আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া ছাড়া কোনো
সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
ওই সভার পর বৈঠকে উপস্থিত বিএটি কর্মকর্তাদের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
শ্রমিকদের আন্দোলন ও দাবি দাওয়ার বিষয়ে বিএটি বাংলাদেশ বলেছে, “কুষ্টিয়ায় আমাদের গ্রিন লিফ থ্রেশিং প্লান্টে কিছু মৌসুমি শ্রমিক বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছেন। বর্তমান অচলাবস্থার দ্রুত নিরসনে উত্থাপিত দাবিগুলোর বেশির ভাগই আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় কার্যকর সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছি। তবে আমাদের দৃষ্টিতে, অবশিষ্ট দাবিগুলো বাংলাদেশ শ্রম আইনের আওতাভুক্ত নয়, ফলে সেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়।“
সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে কোম্পানির প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তায় সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘উন্মুক্ত ও গঠনমূলক’ একাধিক আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা তুলে ধরে বিএটি বাংলাদেশের দাবি, আইনসঙ্গত কাঠামোর মধ্যে থেকে আরও ভালো সুযোগ-সুবিধাও প্রস্তাব করেছে কোম্পানিটি।
আরও পড়ুন
'দাবি না মানায়' কুষ্টিয়ায় বিএটি শ্রমিকদের কর্মবিরতি-মানববন্ধন