আলোচনা শেষে ছয় ঘণ্টা পর কর্মচারীরা কর্মবিরতি তুলে নিলে এবং আন্দোলনে আহতদের পাঁচ দফা দাবি পূরণের আশ্বাসের পর হাসপাতালের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়।
Published : 10 Mar 2025, 09:53 PM
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের মারামারিতে দিনভর ভুগেছে হাসপাতালের সহস্রাধিক রোগী।
ছয় ঘণ্টা পর আলোচনা শেষে হাসপাতালের কর্মচারীরা কর্মবিরতি তুলে নিলে এবং আন্দোলনের আহতদের পাঁচ দফা দাবি পূরণের আশ্বাসের পর হাসপাতালের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়।
এরপর মারামারির মধ্যে আটকে থাকা চিকিৎসকরা সেনা প্রহরায় হাসপাতাল ছাড়েন।
এদিকে সংঘর্ষের সময় পঙ্গু হাসপাতালে কর্মরত আহত আনসার সদস্য রুহুল আমিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মারামারি মধ্যে অচেতন অবস্থায় তাকে পাশের হাসপাতালটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তার শয্যাপাশে সহকর্মী দুজন আনসার সদস্য রয়েছেন। তারা বলেন, রুহুল আমিনের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে দায়িত্বরত ছিলেন। মারামারির সময় কেউ একজন তার মাথায় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি।
এ বিষয়ে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কেনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিকেল ৫টার দিকে বলেন, ”এতক্ষণ তো আমরা অনেকটা অবরুদ্ধের মত ছিলাম। আমরা খোঁজ নিচ্ছি কোথায় কে আহত হয়েছে। আমরা সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করব।”
বিকেলে তার সঙ্গে কথা বলার সময় পরিচালকের কক্ষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা, পুলিশ ও সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা অবস্থান করছিলেন।
এসময় সেনা সদস্যদের একটি দলের প্রহরায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা বাসার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল ছাড়েন। হাসপাতাল ছাড়ার সময় তাদের ওপরেও হামলা হয় কী না সেই ভয়ে ছিলেন তারা।
হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিচালকের কক্ষসহ আশপাশের কক্ষগুলোর জানালার কাচ, নামফলকসহ অনেক কিছু ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিচালকের কক্ষের করিডোরে প্রচুর কাচ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ কারণে অন্যান্য চিকিৎসক ভয় পাচ্ছিলেন বলে তুলে ধরেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দাবি, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে গেলে কর্মচারীদের হামলায় তাদের অন্তত পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন। পারভেজ হোসেন নামে একজন আহত আন্দোলনকারী দাবি করেন তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারীরা।
তবে প্রথমবার সাক্ষাতের সময় পারভেজের হাত স্বাভাবিক ছিল। কিছুক্ষণ পর তাকে ডান হাতের দুই জায়গায় সাদা ব্যান্ডেজ বেঁধে ঘুরতে দেখা যায়। এসময়ও তার পিঠে একটি লাঠি গোঁজা ছিল।
মারামারির ঘটনার পর হাসপাতালের কর্মচারীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না। তাদের একজন নেতার দাবি, সংঘাতের ঘটনায় তাদের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। পায়ে জখম পাওয়া যে ছাত্ররা লাটি বা ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটছিলেন সেগুলো দিয়েই তারা কর্মচারীদের পিটিয়েছেন।
আহত ছাত্র পারভেজ হোসেনের ভাষ্য, হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের পাশের ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে তারা একসঙ্গে রাখা অনেকগুলো লাঠি, শেখ হাসিনার ছবি উদ্ধার করেছেন।
পঙ্গু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের এক কর্মীর সঙ্গে রোববার রাতে আহত ছাত্রদের হাতাহাতির ঘটনার জেরে সোমবার সকাল থেকে হাসপাতালটিতে মারামারিতে জড়ান দুই পক্ষ।
আহত ছাত্রদের হাতে মার খেয়ে কর্মীরা কাজ করা বন্ধ করে দেন। সকাল থেকে জরুরি বিভাগ বন্ধ ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা। দূরদূরান্ত থেকে আসা হাত-পা ভাঙা রোগীদের তীব্র কষ্টের মধ্যে পড়তে হয় এ ঘটনায়।
এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মূলত দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মানুষ আসে জরুরি চিকিৎসা নিতে। এসব মানুষের তাৎক্ষাণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
প্রায় ছয় ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জরুরি বিভাগের টিকেট বিক্রি শুরু হয়। চিকিৎসকদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।
মারামারি: ছয় ঘণ্টা পর পঙ্গু হাসপাতালে জরুরি সেবা চালু