“শঙ্কা না থাকলেও আমরা সতর্ক থাকতে চাই- যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে,” বলেন তিনি।
Published : 07 Oct 2024, 04:25 PM
হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজায় কোনো ধরনের অপতৎপরতার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম।
মোবাইল টিমসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স মণ্ডপের কাছাকাছি দূরত্বে থাকছে তিনি বলেছেন, “প্রতিটি পূজামণ্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আনসার বাহিনী ও ভলানটিয়ার গ্রুপ রয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে, কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপতৎপরতার কোনো সুযোগ নাই।”
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
গত ২ অক্টোবর মহালয়ায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর সপ্তমী, ১১ অক্টোবর অষ্টমী, ১২ অক্টোবর নবমী এবং ১৩ অক্টোবর দশমী শেষে হবে দেবী বিসর্জন।
ময়নুল বলেন, “প্রাক পূজার যে ব্যবস্থা, পূজার আগে আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে ইতোমধ্যে আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে বোধন এবং ষষ্ঠী পূজা থেকে সকল পূজামণ্ডপে আনসার-ভিডিপি মোতায়েন হবে। পুলিশের অন্যান্য স্ট্রাইকিং ফোর্সের যে টহল ফোর্স, তারাও মোতায়েন থাকবে।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। এ পরিস্থিতিতে পূজায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্বেগ কাটাতে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আইজিপি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার জন্য এখন সশস্ত্র বাহিনী প্রতিটি জেলায় মোতায়েন আছে। তারাও কিন্তু পূজার ডিউটি পালন করবে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড, নৌ অঞ্চলে নৌ-পুলিশসহ বিশেষায়িত যে পুলিশ বাহিনী রয়েছে, তারাও দায়িত্ব পালন করছে।
“যেকোনো জায়গায়, যেকোনো পূজামণ্ডপে যদি কেউ শান্তিশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটনায়, যদি কেউ অপতৎপরতা চালায়, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ময়নুল ইসলাম জানান, ইলেক্ট্রনিক বা সোশাল মিডিয়ায় গুজব ঠেকাতে সাইবার মনিটরিং ও সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেও দুর্গতরা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারবে।
এছাড়া তাৎক্ষনিক তথ্য সংগ্রহে প্রতিটি জেলা-উপজেলা এবং পুলিশ সদর দপ্তরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালুর কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ময়নুল বলেন, “আমরা সকল সময় ঝুঁকিটা পর্যালোচনা করি এবং ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখেছি যে- কোনো শঙ্কা নেই। তার পরেও আমরা সতর্ক থাকতে চাই- যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে।”
তিনি বলেন, “পূজামণ্ডপের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি হয় নানা কারণে। এবার কোনো কোনো অঞ্চলে কিছুটা বন্যার কারণে অনেকেই হয়তো… কিন্তু সেই সংখ্যাটা নিতান্তই কম। আমাদের সাড়ে ৩১ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।
“আপনারা শুনে খুশি হবেন ঢাকায় কিন্তু পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। আগে যা ছিল, তার থেকে ৬টি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এইটা কমা-বাড়ার সঙ্গে অন্যকিছু জড়িত না।”
মণ্ডপের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে আইজিপি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ যে পূজামণ্ডপগুলো আছে, যেগুলো আমাদের মনে হয় ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে- সেসব পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা আছে।
“শুধুমাত্র একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায়, অনেক ক্ষেত্রে সামর্থের কারণে বা সহজলভ্য না, এ কারণে এই টেকনোলজি ব্যবহার সম্ভব হয় নাই। তবে এটা নিয়ে শঙ্কার কিছু নাই। প্রতিটা পূজামণ্ডপে আনসার-ভিডিপির সদস্যরা থাকবে, যারা পূজা মণ্ডপে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করবে।”
এর আগে গেল শনিবার ঝুঁকির বিবেচনায় প্রায় ১৫ হাজার পূজামণ্ডপকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ দেওয়ার কথা বলেছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
উদ্বেগ থাকলেও আনন্দমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উৎসব উদযাপনের আশা প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, পূজায় সব মিলিয়ে মোতায়েন হবে ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য। এর মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত ১৫ হাজার ৩২টি মণ্ডপে থাকবেন ৫৩ হাজার ১৪৮ জন।