”আমাদের বিষয় হল প্রথম তারিখে না আসলে তাকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায়, শতকরা একশজনকে। ওই বিচেনায় তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
Published : 10 Jun 2024, 08:43 PM
জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে সময় চেয়ে করা বেনজীর আহমেদের আবেদনটি সংস্থার গেইটে ‘জনৈক ব্যক্তি’ দিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
সোমবার দুদকের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) প্রতিবেদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ডেকেছিল দুদক। গত ৬ জুন সকাল ১০টায় সেগুন বাগিচায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে তাকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে গুঞ্জনের মধ্যেই গত বুধবার তার পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে আগামী ২৩ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে বেনজীরকে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীরের আবেদনটি কে করেছেন এমন প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আবেদন আমাদের গেইটে দিয়ে গেছে, জনৈক ব্যক্তি, তার নাম পরিচয় আমরা জানি না। একজন পরিচয় না দিয়ে আবেদন ড্রপ করে গেছে।”
তিনি বলেন, “এখন আবেদন গ্রহণ হবে কি না সেটা বিবেচ্য বিষয় না। আমাদের বিষয় হল প্রথম তারিখে না আসলে তাকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায়, শতকরা একশজনকে। ওই বিচেনায় তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সময় বাড়ানো নিয়ে তার আবেদন আমাদের বিবেচনায় গ্রহণ করব কি, না করব না, ওই ব্যাপারে আমরা আলোচনায় আসি নাই।”
বেনজীরকে গত ৬ জুন এবং ’অবৈধ সম্পদ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে ৯ জুন তলব হতে নোটিস করা হয়েছিল। পরে বেনজীরের মত তার স্ত্রী-কন্যারাও সময় চেয়ে আবেদন করেন।
এখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখন বেনজীরকে ২৩ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ২৪ জুন সময় নির্ধারণ করেছে দুদক।
বেনজীর আহমেদেই বাংলাদেশের প্রথম পুলিশপ্রধান, যিনি একাধারে এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবেরও প্রধান ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।
গত ৩১ মার্চ 'বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ' ও ৩ এপ্রিল 'বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট' শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে বেনজীর ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে ছাপা হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনেও শত শত বিঘা জমি আছে পরিবারটির নামে। ঢাকার গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট ছাড়াও উত্তরা ও ভাটারায় সাত তলার দুটি ভবনের মালিক পরিবারটি।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।
এরপর ২২ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বেনজীরের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা।
সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।
একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।
নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আটটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
দুদকের আবেদনে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন বেনজীর, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ারও অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়।
পরে আরও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ আসে। এরই মধ্যে সেগুলো দখলে নিয়েছে সরকারি প্রশাসন।
তবে আদালতের আদেশ আসার আগেই বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকা তুলে নেওয়ার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এরপর সবাই দেশের বাইরে চলে গেছেন, এমন তথ্য ছাপা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে শুরুতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও গত ২ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বেনজীর।
যারা লেখালেখি করছেন, তাদেরকে ধৈর্য ধরার ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে সেদিন তিনি লিখেছেন, “দু একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুব ই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপ সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য ধরুন।”
পরে ২০ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় ২৫ মিনিটের একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন সাবেক আইজিপি। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’ বলে তিনি দাবি করেন।
তবে বেনজীরের নামে ফেইসবুক পেজটি এখন অকার্যকর। আর সেদিনের পর তার অবস্থান যেমন জানা যাচ্ছে না, তেমনি তার কোনো বক্তব্যও গণমাধ্যমে আসেনি।
আরও পড়ুনর...
নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর বেনজীরের রিসোর্টে ক্রোক বিজ্ঞপ্তি
বেনজীরের মত স্ত্রী-কন্যাদেরও সময় দিল দুদক
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বেনজীর পাবেন?
বেনজীরের রিসোর্টের নিয়ন্ত্রণ নিল জেলা প্রশাসন