অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ জুন তাদেরকে দুদকে হাজির থাকতে নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে। বেনজীরকে আসতে হবে তার আগের দিন।
Published : 09 Jun 2024, 05:41 PM
সময় আবেদন পেয়ে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের মতো তার স্ত্রী কন্যাকেও জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে নতুন তারিখ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীরকে যেদিন ডাকা হয়েছে, তার পরদিন আগামী ২৪ জুন আসতে হবে তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই কন্যা ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
বেনজীরকে গত ৬ জুন এবং তার স্ত্রী কন্যাদেরকে ৯ জুন রোববার তলব হতে নোটিশ করা হয়েছিল। তাদের বিদেশ চলে যাওয়ার গুঞ্জনের মধ্যে গত ৫ জুন বেনজীর জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে সময় চেয়ে আবেদন করেন।
দুদক আইন অনুযায়ী কাউকে নোটিস করলে তিনি আসতে বাধ্য কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। তবে তারা সময় চাইতে পারেন। আর সময় চাইলে কমিশন ১৫ দিন সময় দিতে পারে।
দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক গত ৫ জুন বেনজীরের সময় আবেদন পাওয়ার পর বলেছিলেন, “সময় দেওয়ার পরও যদি তিনি দুদকে না আসেন তাহলে ধরে নিতে হবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তখন নথিপত্র দেখে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় হবে, না হলে নয়।”
বেনজীর সময় আবেদন করার পর দুদক জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার নতুন তারিখ ঠিক করেছে ২৩ জুন।
বেনজীরের মতই স্ত্রী কন্যারাও হাজির না হয়ে নির্ধারিত দিন সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে দুদকের কর্মকর্তারা কিছু বলছেন না।
বেনজীর ও তার স্ত্রী-কন্যারা এই মুহূর্তে দেশে আছেন কি না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত নয়। তারা সবাই দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদেই বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ প্রধান, যিনি একাধারে এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবেরও প্রধান ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।
গত ৩১ মার্চ 'বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ' ও ৩ এপ্রিল 'বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট' শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে বেনজীর ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির আরেক প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
আরও অন্যান্য গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিবারটি উত্তরবঙ্গে ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনেও শত শত বিঘা জমি আছে পরিবারটির নামে। ঢাকার গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট ছাড়াও উত্তরা ও ভাটারায় সাত তলার দুটি ভবনের মালিক পরিবারটি।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এপ্রিলের শেষে বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।
এরপর ২২ এপ্রিল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন তারা।
সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।
একই দিন হাই কোর্ট এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের বিষয়ে উঠা অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ।
নির্দেশনার পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আটটি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
দুদকের আবেদনে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব এবং বিভিন্ন কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা শেয়ারও অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়।
পরে আরো সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ আসে। এরই মধ্যে সেগুলো দখলে নিয়েছে সরকারি প্রশাসন।
তবে আদালতের আদেশ আসার আগেই বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকা তুলে নেওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এরপর সবাই দেশের বাইরে চলে গেছেন, এমন তথ্য ছাপা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে শুরুতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও গত ২ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বেনজীর।
যারা লেখালেখি করছেন, তাদেরকে ধৈর্য ধরার ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে সেদিন তিনি লিখেছেন, “দু একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুব ই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য ধরুন।”
পরে ২০ এপ্রিল নিজের ফেইসবুক পাতায় ২৫ মিনিটের একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন সাবেক আইজিপি। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’ বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি যেসব সম্পত্তি অর্জনের তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলছেন, কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন বেনজীর।
তবে বেনজীরের নামে ফেইসবুক পেজটি এখন অকার্যকর। আর সেদিনের পর তার অবস্থান যেমন জানা যাচ্ছে না, তেমনি তার কোনো বক্তব্যও গণমাধ্যমে আসেনি।
এর মধ্যে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া তারানা হালিম বেনজীরের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সংসদে সোচ্চার হয়েছেন।
আরও পড়ুন
‘বেনজীর কোথায় জানেন না’, তাহলে রাষ্ট্র আছে? প্রশ্ন ফখরুলের
প্রধানমন্ত্রী এসে দেখুন বেনজীর কীভাবে হিন্দুদের জমি দখল করেছেন: রানা দাশগুপ্ত
বেনজীরের রিসোর্ট: প্রায় ৬০০ কেজি মাছ চুরির চেষ্টায় মামলা
বেনজীরের রিসোর্টের নিয়ন্ত্রণ নিল জেলা প্রশাসন
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বেনজীর পাবেন?
বেনজীরের সম্পদ দেখভালে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ
ব্যবস্থা নিন, নইলে ‘অন্য বেনজীররা’ আশকারা পাবেন: সংসদে চুন্নু