সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগের সময়ে ‘গুমের শিকারের’ পাশাপাশি মামলা ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য দেন।
Published : 06 Feb 2025, 11:04 PM
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সেখানে গুমের শিকার পরিবার ও সাংবাদিকদের প্রবেশের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে রাজধানীর শাহবাগে।
সেখানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের সব হত্যাকাণ্ড, গুম, দুর্নীতি ও লুটপাটের আমলনামা তৈরির জন্য অবিলম্বে ‘ট্রুথ কমিশন গঠন’ করারও দাবি তুলে ধরেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একদল ব্যক্তি ব্যানার নিয়ে সমাবেশ করেন। তবে ব্যানারে কোনো সংগঠনের নাম দেননি তারা।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগের সময়ে ‘গুমের শিকারের’ পাশাপাশি মামলা ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য দেন। তারা ‘আয়নাঘরে’ প্রবেশের দাবি জানান।
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের শিগগির ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের বিষয়ে এদিন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে সেখানে পরিদর্শনের নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলা না হলেও ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তিনি যাবেন বলা হয়েছে। তার সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা থাকবেন, তাও বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।
তুলে নেওয়া সেই সব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন'।
১৯ জানুয়ারি ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তার পরিদর্শনের খবরে সাংবাদিক ও বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীরা সঙ্গে থাকবেন বলে আশা করছিলেন তাদের পরিবার।
তবে ‘সেনাবাহিনীর আপত্তির কারণে’ তা ‘থমকে’ গেছে বলে বুধবার খবর দেয় নেত্রনিউজ।
সংশ্লিষ্ট চারজন কর্মকর্তার বরাতে নেত্রনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের সময় সাংবাদিক ও বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সেনা সদর। কারণ তারা মনে করছে, সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের পরিদর্শন সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিতে ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলতে পারে।
বৃহস্পতিবার শাহবাগের সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের সময়ে ‘গুমের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের আয়নাঘরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলে ধরা হয়।
ওই কর্মসূচির আয়োজকদের একজন নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব অনিক রায় বলেন, “এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছিল। তাদের ম্যান্ডেট ছিল- জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ জড়িত সকল অপরাধীদের বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও শহীদদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু আমরা দেখছি তারা সেই কাজ করছে না। এখন পর্যন্ত শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও করা হয়নি।”
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক বলেন, “এই সরকারকে বলতে চাই ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ। শুধু গাড়ি নিয়ে ঘুরলেই হবে না। এখন কাজের সময়। কাজ না হলে আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হবে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই অবিলম্বে ‘ট্রুথ কমিশন’ করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার সকল অপরাধের আমলনামা তৈরি করতে হবে।”
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ওলিউর সান বলেন, “গত ১৫ বছরে যারা জনগণের ওপর জুলুম করেছে, তাদের বিচার করা যথাযথ কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সরকারের উপর যদি ভেতরে-বাইরে চাপ থাকে তা জনগণকে জানান। আমরা রাস্তায় আছি। কিন্তু বিচারের প্রক্রিয়া বিলম্ব করা চলবে না।”
সমাবেশে অধিকারকর্মী মাহতাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, “শেখ হাসিনা এখনও কেন ভারতে। প্রথম ক্ষোভ হওয়া উচিত ছিল তাকে কেন গ্রেপ্তার করে বিচার করা হচ্ছে না। ছয় মাস হল কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘স্ট্যান্টবাজি’ করছে, কিন্তু অ্যাকশন দেখাতে পারছে না।”
সমাবেশে ফেরদৌস আরা রুমি, আবু রায়হান খান ও মো. মুকুল হোসেন বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন-