আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় সাংবাদিক ও বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে রাখা নিয়ে এর আগে আপত্তি জানায় সেনা সদর, বুধবার এমন খবর দেয় নেত্রনিউজ।
Published : 06 Feb 2025, 09:55 PM
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে শিগগির বহুল আলোচিত আয়নাঘর পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
সেখানে পরিদর্শনের নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলা না হলেও ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তিনি যাবেন বলা হয়েছে, সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।
আয়নাঘর পরিদর্শন করতে যাওয়ার ইচ্ছে এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশ করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরেন কমিশনের সদস্যরা।
পাশাপাশি ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ পরিদর্শনের অনুরোধ জানান তারা। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্ত হবেন এবং অভয় পাবেন।
প্রধান উপদেষ্টার আয়নাঘর পরিদর্শনের খবরে সাংবাদিক ও বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীরা সঙ্গে থাকবেন বলে আশা করছিলেন ভুক্তভোগীদের পরিবার। তবে ‘সেনাবাহিনীর আপত্তির কারণে’ তা ‘থমকে’ গেছে বলে বুধবার খবর দেয় নেত্রনিউজ।
সংশ্লিষ্ট চারজন কর্মকর্তার বরাতে নেত্রনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় সাংবাদিক ও বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সেনা সদর। কারণ তারা মনে করছে, সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের পরিদর্শন সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিতে ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলতে পারে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পোর্টালটি লিখেছে, গত জানুয়ারির শেষে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন এক ’মেমোতে’ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল, বেঁচে ফেরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিতে না দেওয়া হলে ৩ ফেব্রুয়ারি তারা আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবে না।
কমিশনের ওই মেমো উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে লেখা হয়, “ভুক্তভোগীদের ওই পরিদর্শনে না নিলে সেটি তাদের আইনগত অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। তাদের ছাড়া ওই পরিদর্শন ফলপ্রসূ হবে না।”
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টার সভায় প্রধান উপদেষ্টার আয়নাঘর পরিদর্শনের যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।
তুলে নেওয়া সেসব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন'।
গত ১৯ জানুয়ারি বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনা প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরা হয়। ছয় বছরের শিশু গুম হওয়ার ঘটনাও তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান কমিশন সদস্যরা।
মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের সেই আহ্বানে তখন সাড়া দিয়ে বলেন, “আপনাদের তদন্তে যেসব ঘটনা উঠে এসেছে, তা গা শিউরে ওঠার মত। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।”
আরও পড়ুন-
শিগগির 'আয়নাঘর' পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
গুমের পেছনে সরকার-সুবিধাভোগীরা, কমিশনের প্রতিবেদনের পরতে পরতে
গুম: শেখ হাসিনা 'নির্দেশদাতা', প্রমাণ পাওয়ার দাবি কমিশনের
গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন করল সরকার
র্যাবের আয়নাঘর, গুম-খুন স্বীকার করলেন মহাপরিচালক, চাইলেন ক্ষমা