মহাবিশ্বের গঠন ও ক্রমবিকাশের পাঠে নতুন আলোর সঞ্চার করার পাশাপাশি সৌরজগতের বাইরে সূর্যের মত নক্ষত্র ঘিরে আবর্তনরত প্রথম গ্রহ আবিষ্কারের স্বীকৃতিতে চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী।
Published : 08 Oct 2019, 04:43 PM
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার এই পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জেমস পিবলস, সুইজারল্যান্ডের মিশেল মায়োর ও যুক্তরাজ্যের দিদিয়ের কেলোর নাম ঘোষণা করে।
১৯৩৫ সালে কানাডায় জন্ম নেওয়া জেমস পিবলস প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আলবার্ট আইনস্টাইন অধ্যাপক। মহাবিশ্বের ক্রমবিকাশ নিয়ে তত্ত্বীয় গবেষণার জন্য তাকে এ বছরের পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস বলছে, পিবলসের কাজ পুরো জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণাকেই সমৃদ্ধ করেছে এবং গত ৫০ বছর ধরে সৃষ্টিতত্ত্বের ধারণাগুলোকে বিজ্ঞানের রূপ দিতে ভূমিকার রেখেছে।
আজকের বিশ্বে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বকে যেভাবে দেখেন, তার কাঠামো তৈরি করে দিয়েছে পিবলসের তত্ত্বীয় কাজ।
2019 #NobelPrize laureate James Peebles took on the cosmos, with its billions of galaxies and galaxy clusters. His theoretical framework, developed over two decades, is the foundation of our modern understanding of the universe’s history, from the Big Bang to the present day. pic.twitter.com/fly4alndv9
— The Nobel Prize (@NobelPrize) October 8, 2019
জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল মায়োর ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করে সুইজারল্যান্ডের লুসানেতে। আর কেমব্রিজের অধ্যাপক দিদিয়ের কেলোর জন্ম তার ২৪ বছর পর, ১৯৬৬ সালে।
আশির দশকের শেষ দিকে এই দুই বিজ্ঞানী একসঙ্গে চোখ রাখতে শুরু করেন আকাশে। দক্ষিণ ফ্রান্সের হাউট অবজারভেটরি থেকে ১৯৯৫ সালে তারা প্রথমবারের মত সৌরজগতের বাইরে কিন্তু মিল্কিওয়ের ভেতরে একটি গ্রহ খুঁজে বের করেন, যা সূর্যের মত একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে।
সৌরজগতের বৃহস্পতির মত আকারের ওই গ্রহের নাম দেওয়া হয় ‘৫১ পেগাসি বি’।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস বলছে, মায়োর আর কেলো যে পদ্ধতিতে গ্রহ খুঁজতে শুরু করেছিলেন, তা ছিল এক যুগান্তকারি আবিষ্কার। এর পর থেকে মিল্কিওয়েতে প্রায় চার হাজার গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
নোবেল পুরস্কারের ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনারের মধ্যে পিবলস পাবেন অর্ধেক। আর বাকি অর্ধেক মায়োর ও কেলো ভাগ করে নেবেন।
আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
নোবেল জয়ের খবরে অধ্যাপক দিদিয়ের কেলো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটা অবিশ্বাস্য। আবিষ্কারটাতো ২৫ বছর আগের। সবাই তখন বলত, এটা নোবেল পাওয়ার মত কাজ। আমি বলতাম, হে হে…।
“ইদানিং আমি একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম সেই আবিষ্কারের কথা। তো, সত্যি বলতে কি, এ খবরটা আমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ হয়েই এসেছে। আমাদের সেই আবিষ্কারের গুরুত্বটা আমি জানি। কিন্তু পদার্থবিদ্যায় এত বড় বড় কাজ হচ্ছে, আমি ধরেই নিয়েছিলাম, এটা (নোবেল) বোধহয় আমাদের জন্য না।”
বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। প্রাণীর কোষ কীভাবে অক্সিজেনের প্রাপ্যতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, সেই রহস্যের কিনারা করে এবার যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম জি কায়েলিন, যুক্তরাজ্যের স্যার পিটার জে র্যাটক্লিফ ও যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেগ এল সেমেনজার এবার চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন।
বুধবার রসায়নে চলতি বছরের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার আসবে সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা।
এক জুরির স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মধ্যে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি গতবছর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার স্থগিত করে। এবার তাই একসঙ্গে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের নোবেলবিজয়ীদের নাম জানানো হবে।
এরপর শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
লেজারের শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার যুগান্তকারী কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গত বছর আর্থার আশকিন, জেরার্ড মুরু ও ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন।
এবারের নোবেল