দুই হাজার আসনের পাঁচটি হলে সংকুলান না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষার্থীর বেশিরভাগকে থাকতে হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে। আকাশচুম্বী বাড়ি ভাড়া হাকলেও থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
Published : 11 Jan 2020, 07:07 PM
আবাসন সংকটকে তাদের প্রধান সমস্যা দাবি করলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ও ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মসিউর রহমান।
এ সমস্যা সমাধানের আশু সমাধান খুঁজতে পরবর্তী বছর কম শিক্ষার্থী ভর্তির কথা পেড়ে তিনি বলেন, “আমরা পরিকল্পনা করছি পরবর্তী বছর থেকে প্রথমবর্ষে প্রতিটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৪০ এ নামিয়ে আনব।”
নতুন হল নির্মাণ করা ছাড়া এ সমস্যা সমাধান না থাকায় তিনি বলেন, “অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
এসব ভাড়া বাড়িতে থাকতে গিয়ে বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে এসব এলাকার বাড়িভাড়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় তিনজন থাকতে পারে এমন ১২ ফুট বাই ১০ ফুটের একটি রুমের ভাড়া প্রায় ছয় হাজার টাকা। যেখানে দুজন থাকতে পারেন এমন রুমের ন্যূনতম ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা। একজন থাকার উপযোগী রুমের ভাড়া তিন হাজার টাকা। এ উচ্চমূল্যের বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটে পড়ছেন।
পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান জানান, “আমাকে একটি সিটের ভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ উচ্চ ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে আমাকে দিনের বড় অংশই টিউশনি করতে হচ্ছে। ফলে পড়ালেখায় সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারছি না।
“বাড়িওয়ালাদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি।”
তার অভিযোগ-বেশিরভাগ বাড়িই নির্মাণাধীন অবস্থায় প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করেই ভাড়া প্রদান করা হয়।
বাংলা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শীলা বলেন, “আমি হলে থাকার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু হলে সিট স্বল্পতার কারণে আমি এখনো সিট পাইনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসন সংকটের কারণে আমি প্রথমবর্ষ থেকেই মেস ভাড়া করে থাকি। বাইরে থাকলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। যেমন, আমার মেসে রান্না করে খাওয়ার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়, তাছাড়া মেসে থাকলে বাজার করাও একটা বাড়তি ঝামেলা।”
পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিউল কায়েস বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুযায়ী হলে আবাসন ব্যবস্থা খুবই কম। ফলে আমাদের বাধ্য হয়ে বাইরে থাকতে হয়।
“বাইরে থাকতে গেলে আমাদের প্রচুর খরচ হয়। তাছাড়া মেসের খাবার নিয়েও আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এতকিছুর জন্য আমরা পড়ালেখার সুষ্ঠ পরিবেশটা পাচ্ছি না। আবার মেস থেকে ক্যাম্পাসে গিয়ে অনেক সময় ক্লাস ধরতে দেরি হয়ে যায়।“
আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহাসিন কাজী বলেন, “আমরা নবীনবাগে ১৪ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একটি বাসায় থাকি। এখানে প্রতি রুমের ভাড়া প্রায় ৫ হাজার টাকা, যেখানে দুইজন শিক্ষার্থী থাকতে পারে।
“মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে আমাদের প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয় বাসা ভাড়া এবং খাবারের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসন সংকট না থাকলে আমাদের এত কষ্ট হত না।”
“এটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমানে উচ্চ বাড়িভাড়া সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু উদ্যোগ তারা গ্রহণ করেছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে স্বাশ্রয়ী বাড়িভাড়া নির্ধারণের চেষ্টা করার কথা ভাবছেন তারা।
তবে এক বাড়িওয়ালা বলেন, “আমার পুরো পরিবার বাড়িভাড়ার টাকায় চলে। দ্রব্যমূল্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে।
“অনেক সময় দেখা যায় বাড়িভাড়া নিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময় ছেড়ে দেয়। তখন ভাড়াটিয়া পাওয়া যায়না তাই আমরা চুক্তি করি।”
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখানকার বাড়িওয়ালারা মেনে চলেন না। নীতিমালায় দুই বছর পরপর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। বাড়িওয়ালারা নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রতিবছরই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করছেন।
“ইউনিয়নে এটির প্রয়োগ নেই।
“আমার ইউনিয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বাড়িভাড়া নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে কোন নীতিমালা নেই।”
তবে বাড়িভাড়া নিয়ে কিছু সমস্যা আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমার ইউনিয়নে বাড়ির সংখ্যা কম, তাই বাড়ির চাহিদা বেশি। এ কারণে ভাড়া একটু বেশি।
“এখন অনেক বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে তখন ভাড়া কমে আসবে।”
তাছাড়াশিক্ষার্থীরা যাতে কম খরচে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।