খাবারে ফরমালিন মিশিয়ে মানুষ মারার মধ্য দিয়ে গণহত্যা করা হচ্ছে মন্তব্য করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
Published : 08 Jan 2020, 06:29 PM
বুধবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য একথা বলেন।
“ফরমালিন এক ধরনের বিষ। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা খাবারের মধ্যে এখন ফরমালিন দেওয়া হয়। শুধু ফলমুল না, সকল ধরনের শাক-সবজি, মাছ-মাংসেও ফরমালিন দেওয়া হয়। এমনকি খাবারের গুঁড়া মসলাতেও কেমিক্যাল মেশানো হয়।”
তিনি বলেন, কাউকে হত্যা করলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু খাবারে ফরমালিন মেশানোর ফলে হাজার হাজার মানুষ মরছে। এটা গণহত্যা। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।
“আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে এত ক্যান্সার রোগীর কথা আমরা শুনতাম না। এখন ক্যান্সার রোগীতে দেশ ভরে গেছে।”
ফরমালিন প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গ্র্যাজুয়েট, শিক্ষক, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার আহ্বান তিনি জানান।
সিলেট শহরের রাস্তাঘাটের ময়লা আবর্জনা নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
“আমার ধারণা ছিল সিলেটের রাস্তা আরেকটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। কিন্তু রাস্তার মধ্যে পলিথিন, পেপার, কলার বাকল, কাগজ, পোটলা রয়েছে; মানে যাচ্ছেতাই অবস্থা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মানসিকতা আমাদের দেশ থেকে মনে হয় হারিয়ে গেছে। বিদেশে গেলে থুথু ফেলাই যায় না। এ বিষয়ে কেউই মাথা ঘামায় না।”
লিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর বুকে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নশীল একটি দেশ। দারিদ্র্য নিরসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে বর্হিবিশ্বে দেশটি এখন রোল মডেল। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার। সময় এখন বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াবার।
স্নাতকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজ তোমরা যারা গ্র্যাজুয়েট হলে তোমরা এক একটি আলোর প্রদীপ। তোমাদের সকলকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসতে হবে। কাঁধে নিতে হবে দেশ ও জাতির দায়ভার। আমি মনে করি, তোমাদের মেধা ও শ্রমেই গড়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত মঞ্চে বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আচার্যের সভপতিত্বে এবং রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেনের সঞ্চালনায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এতে ২০০১-০২ থেকে ২০১০-১১ সেশন পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের মোট ৬ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তাছাড়া সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ২০ জনকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি।
জাতীয় সংগীত ও পবিত্র ধর্মগ্রস্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর ১টায় হযরত শাহজালালের মাজার এবং এরপর শাহ পরানের মাজার জেয়ারত করেন রাষ্ট্রপতি। সেখান থেকে চলে আসেন ক্যাম্পাসে সমাবর্তনস্থলে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতম সমাবর্তন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় সমাবর্তন হয়েছিল ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর।