আপনার বই-খাতার পৃষ্ঠা হাতির বিষ্ঠা থেকে তৈরি নয় তো? যদি দেখতে একটু রঙে মন্দা আর ‘মেড ইন থাইল্যান্ড’ হয়, তাহলে হতেও পারে!
Published : 13 Aug 2017, 11:28 AM
জার্মান ভিসার আবেদনের জন্যে একটা ভাষা জানি- এমন সার্টিফিকেট লাগবে। সেটা ছাড়া দুবাইয়ে অবস্থিত জার্মান দূতাবাস ভিসা ইস্যু করবে না। চাকরি ভিসা, পরিবার ভিসা বা তিন মাসেরও বেশি সময় জার্মানিতে অবস্থান করতে হবে এমন ভিসার আবেদনের সময় ‘ডয়েচ লেভেল A1’ ভাষা সার্টিফিকেট লাগে।
এই সার্টিফিকেট প্রমাণ করবে যে আপনি অল্প অল্প জার্মান ভাষা জানেন। নতুন অবস্থায় জার্মানিতে চলতে-ফিরতে আপনার কোনও সমস্যা হবে না। ছাত্র ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম আছে।
আর এই সার্টিফিকেটের সূত্র ধরেই আমার প্রথমবার থাইল্যান্ডে যাওয়া। রাজধানী ব্যাংককে নির্ধারিত জার্মান স্কুলে ভাষা-কোর্স করার সময় ছুটির ফাঁকে ফাঁকে থাইল্যান্ডে অনেক ঘুরেছি।
দুনিয়া জুড়ে থাই খাবারের অনেক সুনামও রয়েছে। কিছু কিছু খাবারে চিনির ব্যবহার আর ওদের যে একটা নিজস্ব মসলা আছে, সেই খাবারগুলো খেতে আমার পছন্দ না। নাকে একটা গন্ধ লাগে। তবে পাপায়া- সালাদ আর টম-ইয়াম স্যুপের ব্যাপারটা কিন্তু আলাদা। আহ্! জিহ্বায় পানি এসে আসে! আরও আছে রেড, ইয়োলো ও মাসামান কারি। এইগুলো ঝালজাতীয় খাবার, খেতেও অনেক সুস্বাদু এবং হালাল।
আমার পরিচিত এক জার্মান ছাত্র, ছুটির সময়ে কাজ করে অর্জিত আয় থেকে খরচ করার পরও একটা অংশ জমা করে। তার স্বপ্ন হলো থাইল্যান্ড, এশিয়া ভ্রমণে যাবে। ব্যাপারগুলো আমার কাছে নতুন ও ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা। ইউরোপে আসার আগে মনে করতাম, ভ্রমণ মানেই তো ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়াতে ঘুরতে যাওয়া।
যাই হোক, মূল গল্পে আসা যাক। ভাষা কোর্সের কয়েকদিনের বিরতিতে পরিকল্পনা হলো থাইল্যান্ডের উত্তরের ‘চিয়াং মাই’ শহরে ঘুরতে যাওয়ার। বাস, ট্রেন টিকেটের দর-দামের যাচাই করছিলাম। পরে লম্বা যাত্রা আর সময় কম- এটা ভেবে থাইল্যান্ডের ‘নক এয়ার’ নামক বিমানে ব্যাংককের ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট থেকে উড়াল দেই।
‘চিয়াং মাই’ শহরে আপনাকে স্বাগতম। ইংরেজিতে এয়ারপোর্টের প্রবেশ পথে লেখা ছিলো। সাথে ছোট-বড় কোনও লাগেজ না থাকায় এয়ারপোর্ট থেকে হেঁটেই আধ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম হোটেলে।
রাতে কয়েকটা ভ্রমণ এজেন্সি যাচাই-বাছাই করে তার একটিতে ‘চিয়াং মাই ট্যুর’ বুক করে নিলাম। সকল ৭টায় গাড়ি আসবে, হোটেল থেকে উঠাবে, চিয়াং মাই শহরে যেসব দর্শনীয় স্থান আছে, সেগুলোতে ওরা নিয়ে যাবে।
আমার বুকিংয়ের মধ্যে আরও যেগুলো ছিল তা হচ্ছে, হাতি ও বাঁশের নৌকায় চড়া, জঙ্গলে হাঁটা, জিপ লাইন (কেবল-তারের মাধ্যমে এক পাশ থেকে আরেক পাশে যাওয়া) ইত্যাদি। দুপুরে খাওয়ার জন্যে ছিল বুফে আর তারপর যেখানে হাতির বিষ্ঠা থেকে তৈরি করা হয় নানান জিনিস, সেই জায়গায় ভ্রমণ করা। যেটাকে ইংরেজিতে ‘এলিফ্যান্ট পু পু পেপার পার্ক’ বলা হয়।
দেখলাম বিষ্ঠা পার্কে কর্মরত থাই মহিলারা এক ধরনের বড়ো বড়ো পাতিলে করে বিষ্ঠাকে সেদ্ধ করছেন জীবাণুমুক্ত করার জন্যে। সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরে একজন আমাকে বলছিলেন, এখন এটাকে হাতে নেওয়া যাবে, খেলা করা যাবে। এটা এখন জীবাণুমুক্ত।
তারপর এভাবেই বিষ্ঠাকে রঙ করে শুকিয়ে পরে তৈরি করা হয় পেপার, বই-খাতা, চিঠির খাম, পোস্ট কার্ডসহ আরও নানান জিনিস, যা ব্যবহার করা হয় নানান কাজে।
একটা কথা শুনেছিলাম- হাতি মরলেও লাখ টাকা, বাচঁলেও লাখ টাকা! আর এখন নিজ চোখে দেখলাম, হাতির বিষ্ঠা থেকেও পাওয়া যায় আরও কয়েক লাখ টাকা।
এসকল দেশে সরকারি-বেসরকারি কিংবা নিজ উদ্যোগে অনেকেই এই পুনর্ব্যবহারের ব্যবসায় জড়িত। গড়ে তোলা হয়েছে ফেলে দেওয়া জিনিস পুনর্ব্যবহার করে নতুন করে তৈরির কারখানা। এতে করে পরিবেশ দূষণমুক্ত, অর্থ উপার্জনসহ হয়ে গেলো কর্মসংস্থানও।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |