দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আহ্বান

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (ডিএফসি) মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো দেশে আরও বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি শিল্পের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ছবি- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইকোনমিক গ্রোথ, এনার্জি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট হোযে ডব্লিউ ফার্নান্দেজের কাছে তিনি এই আহ্বান জানান।

ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটি বৈঠক হয় বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার সাজ্জাদ হোসেন।

বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয় এবং উভয় পক্ষই এ সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বলে জানান তিনি।

এসময় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে স্বনির্ভর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত নীতির বিষয়ে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিকে অবহিত করেন জ্বালানি উপদেষ্টা।

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (ডিএফসি) মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো দেশে আরও বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত।

তিনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এবং বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তি মডুলার চুল্লির সম্ভাবনা দেখার জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলিকে উৎসাহিত করেন।

তেল, গ্যাস, কয়লাসহ পারমাণবিক এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকার কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনছে সে বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জ্বালানি ঘাটতি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে উল্লেখ করে পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষন করেন উপদেষ্টা।

ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্বের দেশগুলিকে প্রভাবিত করছে স্বীকার করে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, খাদ্য, জ্বালানি বা সারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।

এসময় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য নিরসনে অগ্রগতির প্রশংসা করেন ফার্নান্দেজ।

নতুন বিভিন্ন সুযোগ এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে শ্রম অধিকার এবং কারখানার নিরাপত্তা আরও উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেন তিনি।

‘ক্লিন এনার্জিকে’ একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে অভিহিত করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি এবং বাংলাদেশ এ ধরনের সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

২০২১ সালের নভেম্বরে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলেন চালু হওয়া ‘গ্লোবাল মিথেন প্লেজে’ যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানান ফার্নান্দেজ।

জ্বালানি উপদেষ্টা এবং মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উভয়েই জানান, বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত ও গভীর হচ্ছে এবং উভয় সরকারের উচিত তাদের অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়া।

পরে বৃহস্পতিবার বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি শিল্পের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে একটি উচ্চ-পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন তৌফিক-ই-ইলাহী-চৌধুরী।

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ‘কারেন্ট স্টেট অব প্লে: ইউএস-বাংলাদেশ এনার্জি কোপারেশন’ থিমের অধীনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বর্তমান জ্বালানি সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী টেকসই সমাধানে সরকারের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন উপদেষ্টা।

ভাসমান সৌরবিদ্যুৎসহ বায়ু এবং সৌরশক্তিকে কিভাবে জ্বালানি মিশ্রণে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে বিষয়টিও গোলটেবিল বৈঠকে আলোচিত হয়।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এই কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।