গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ডানপন্থিদের পাশাপাশি ‘তথাকথিত বামপন্থিরা’ও ষড়যন্ত্র করছে বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
Published : 10 Feb 2020, 08:46 PM
তিনি বলেন, “ধর্মবাদী তো বটেই, ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ডান ও তথাকথিত বামও এক হচ্ছে। তারা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির আগেই মরিয়া আক্রমণ করবে।”
সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় একথা বলেন মেনন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে যিনি তার আগের বাম মিত্রদের সমালোচনায় রয়েছেন।
সংসদে আলোচনায় সরকারের সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগের আগের সরকারের মন্ত্রী মেনন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “এটা সত্য যে ঐ নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে খুব কম এসেছে। কিন্তু সেটা কেবল এ (বিএনপির) কারণেই নয়। আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দ দলের সমর্থকরাও ভোট দিতে আসে নাই। ভোট থেকে মানুষের এই দূরত্ব গণতন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। নির্বাচন তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোকেও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।”
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবি তুলে মেনন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ধরিত্রীকন্যা উপাধি পেয়েছেন, কিন্তু সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলপিজি কারখানাসহ বিপজ্জনক সব কারখানার যখন ভিড়, তখন সুন্দরবন থাকবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ হয়।
“কিছু মুনাফালোভীর দল পরিবেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সব উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। আমরা নেপাল ও ভুটানের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ পাওয়ারপথ ছেড়ে কিছু ব্যক্তির মুনাফা লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করছি।”
শরিয়ত বাউলকে গ্রেপ্তারে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর পক্ষে ওয়াজকারী আজহারী সম্পর্কে ধর্মমন্ত্রী বলেছেন, ‘তিনি জামাতের পক্ষ হয়ে সে কাজ করেছেন’। আইসিটি আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় নাই, বরং তাকে নির্বিঘ্নে মালয়েশিয়ায় চলে যেতে দেওয়া হয়েছে।
“আর শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে শরিয়ত ও মারফতের দ্বন্দ্ব অনেক পুরাতন। এখন সৌদী-পাকিস্তানি ও জামাতিদের ওহাবিবাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের দ্বন্দ্বের সম্পর্কে যখন রাষ্ট্রীয় আইন ব্যবহার করা হয়, তখন উদ্বেগের বিষয়।”
“পাঠ্য বইয়ে হিন্দু লেখকদের লেখা তুলে দেওয়া, গল্প-কথা-চিত্রে ধর্মভাবের প্রতিফলনের নতুন সব ব্যবস্থা আমাদের আতঙ্কিত করে। সেই ছোট বেলায় আমাদের মধ্যে পাকিস্তানি ভাব আনতে ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি’ কে ‘সুবেহ সাদেকে উঠে দিলে দিলে বলি, হররোজ আমি যেন ভালো হয়ে চলি’ পড়ানো হত। সেই ভাবটাই নিয়ে আসা হচ্ছে পাঠ্যবইগুলোতে।”
উচ্চ শিক্ষার নামে বাণিজ্য, উপাচার্যদের দুর্নীতি, গবেষণায় দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।
অর্থনীতির হাল নিয়ে এই বাম নেতা বলেন, “অর্থমন্ত্রী সংসদে অর্থনীতির ভালো অবস্থার কথা বললেও বাইরে স্বীকার করেছেন যে রপ্তানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নেতিবাচক। আয় বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
“ঋণ খেলাপি বাড়বে না বলে অর্থমন্ত্রী যে দাবি করেছিলেন, তা মিথ্য প্রমাণ করে গত এক বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার উপর খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ঋণ খেলাপিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের শীর্ষে ।”
ঋণ খেলাপিদের মতো অর্থ পাচারকারীদের তালিকাও সংসদে প্রকাশের দাবি জানান মেনন। ‘ব্যাংক লুটেরা’দের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবিও তিনি জানান।
তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে মেনন বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। নারী শ্রমিকদের কাজের স্থানে নিরাপত্তা, ৬ মাসের মাতৃত্ব ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।