বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রুশ বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে ‘অক্টোবর বিপ্লবের শিক্ষা: বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বামপন্থিদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
সেলিম বলেন, “বামপন্থিদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ভালো। না হলে এখনও জাতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, তার গুণগত প্রয়োগ করব। তৃণমূলের কাজের উপর আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
“কে মস্কোপন্থি, কে পিকিংপন্থি তা ভুলে সবাইকে এক সাথে আসতে হবে। আমাদের নিশানা এক হলে নিশান এক হবে না কেন?”
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সমালোচনা করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তিনি বলেন, “রাশেদ খান মেননরা বলছেন, দেশে এখন সবচেয়ে বড় বিপদ হল সাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করা। তারা বলছেন, গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতার ইস্যুটা আগে সমাধান করে নেই, তারপরে ভাত ও কাপড়ের ইস্যু তুলেন।
“তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধ হল, পথে-ঘাটে দেখা হলে আমি জিজ্ঞাসা করি, মেনন ভাই অনেক বছর তো হল, কিছু কি আগাইতে পারল না পিছাইল? সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই কি আগাইতে পারলেন নাকি হেফাজতের সঙ্গে আরেকটু শেখ হাসিনাকে আপনি আগায়া দিলেন? ”
সিপিবি সভাপতি বলেন, এখন তাদের দলের ‘প্রধান কাজ’ আওয়ামী লীগের ‘দুঃশাসনের’ হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা।
“আমাদের পার্টি এ কাজটি সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জোটে এ সিদ্ধান্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাব। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদি দুঃশাসনের হাত থেকে মুক্ত করতে লড়াইয়ের চ্যাম্পিয়ন হতে হবে বামপন্থি শক্তিকে।”
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, “আওয়ামী লীগ কার্যত একদলীয় আধিপত্যের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করে বসে আছে। যে কোনো সময়ে রাজনীতিতে একটা ভারসাম্য থাকে। বিদেশি শক্তি-দেশি শক্তি মিলায়ে ঝিলায়ে এক ধরনের স্থিতাবস্থা ছিল, কিন্তু অতি সম্প্রতি আমি স্পষ্ট দেখছি, স্থিতাবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।”
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার এখনই ‘সঠিক সময়’ বলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের উদ্দেশে বলেন তিনি।
“এখনই প্রপার টাইম। সাপ যখন খোলস ছাড়ে তখন সে নির্বিষ হয়ে যায় তখন তাকে ধরা যায়। দিস ইজ দ্য উইক পয়েন্ট। এই সময় বেশি দিন পাব না।”
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছাড়াও জাতীয় গণফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বক্তব্য দেন।
খালেকুজ্জামান বলেন, “দেশে এখন ৫ ভাগ মানুষের দাপটে ৯৫ ভাগ মানুষের মানবিক মর্যাদা ভয়ে-ত্রাসে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা চর্চা তো দূরে থাকুক ভোটের বাক্স থেকে বহু দূরে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতির পুরো মাঠ দানবদের দখলে।”
আওয়ামী লীগ সরকার ‘যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে' দেশকে ভারতের ‘স্যাটেলাইট স্টেটে’ পরিণত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, “অনুগত, দাসানুদাস পররাষ্ট্র নীতিতে দেশ আজ ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি।”
ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, “আওয়ামী লীগ আজকে গণবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। লুটেরা, বুর্জোয়া, আমলাতন্ত্র, ভারত ও সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে তারা যে কোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে। সে প্রেক্ষাপটে জনগণ বাম শক্তির দিকেও তাকিয়ে নেই। বাম গণতান্ত্রিক শক্তিও আজ জনগণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তারা আমাদের উপরেও আস্থা রাখতে পারছে না। এ দায়ভার আমাদের নিতে হবে।”
সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।
নান্নু বলেন, “অপরাপর রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের ঐক্য হতে পারে। তবে তা হবে ইস্যুভিত্তিক, রাস্তায় যারা আন্দোলন করেন তাদের নিয়ে। তবে শাসক শ্রেণির লেজুড়ে পরিণত হলে চলবে না। জনগণ যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাম শক্তির উপর থেকে তখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে। তবে তা হবে নিজ দলের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে।”
ঐক্য গড়ে তুলতে মতভেদ ভুলে এখন সব বাম শক্তিকে এক কাতারে আসতে অনুরোধ জানান জোনায়েদ সাকি।
বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দেওয়া অনুরোধ জানিয়ে টিপু বিশ্বাস বলেন, “আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করবে, তা বাস্তবতা বলে না। তবে সরকার পরিবর্তন মূল ইস্যু নয়, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনই হবে মূল ইস্যু। আজকে আমাদের বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”