পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জবাবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
Published : 26 Feb 2019, 08:54 AM
বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে ১২টিজঙ্গি মিরাজ জঙ্গি বিমান জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা ও হিজবুল মুজাহিদিনের অবস্থান লক্ষ্য করে ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করে।
পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করা এই জঙ্গিগোষ্ঠীটি আরও হামলার ছক কষছিল বলে অভিযোগ ভারত সরকারের।
নয়া দিল্লি বলছে, বালাকোটে চালানো বিমান হামলায় ‘প্রায় ৩০০ সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে বলেছেন, “বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের সবচেয়ে বড় শিবিরে হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনারত বহু সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক, জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ও জিহাদি গোষ্ঠী ধ্বংস হয়েছে।”
এই হামলাকে ‘প্রতিরোধমূলক অসামরিক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
“দেশের বিভিন্ন অংশে আরও আত্মঘাতী হামলার ছক কষছে জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং এই উদ্দেশ্যে আত্মঘাতী জিহাদিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রে এমন খবর পেয়েছিলাম আমরা।
“জইশ-ই-মোহাম্মদ ও অন্যান্যরা বিশাল সন্ত্রাসী শিবির পরিচালনা করে যেগুলোতে যেকোনো সময় কয়েকশ জিহাদিকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে তারা, বহুবার এমন প্রমাণ দিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল এবং তাই নেওয়া হয়েছে,” বলেছেন তিনি।
হামলা ‘পুরোপুরি পরিকল্পনামতো’ চালানো হয়েছে এবং ‘শতভাগ সফল হয়েছে’ বলে ভারতীয় গণামধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র।
নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) অপর পাশে ১৯ মিনিটের অভিযানে লেজারনিয়ন্ত্রিত বোমা নিক্ষেপ করে ‘সন্ত্রাসীদের লঞ্চ প্যাড’ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছে।
নয়া দিল্লি সরকারের শীর্ষ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বালাকোটে চালানো এ বিমান হামলায় ‘প্রায় ৩০০ সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে পাকিস্তান বলেছে, এই আক্রমণে কোনো ক্ষয়ক্ষতিবা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর পাল্টা এ হামলা চালালো ভারত।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ।
Payload of hastily escaping Indian aircrafts fell in open. pic.twitter.com/8drYtNGMsm
— Maj Gen Asif Ghafoor (@OfficialDGISPR) February 26, 2019
মঙ্গলবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বলেছে, বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতীয় সামরিক বিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর পাকিস্তানি জঙ্গি বিমানের ‘তাড়া খেয়ে পালানোর’ আগে বালাকোটের কাছে ‘বোমা ফেলে’ গেছে, কিন্তু তাতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর এক টুইটে বলেছেন, “মুজাফরাবাদ সেক্টর দিয়ে ভারতীয় বিমানগুলো অনুপ্রবেশ করেছিল
মুজাফরাবাদ এলাকাটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অংশ এবং বালাকোট শহরটি কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে অবস্থিত।
বালাকোটের ওই জঙ্গি ঘাঁটিটির অবস্থান ঘন বনের ভিতরে পাহাড়ের ওপরে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বেসামরিক এলাকাগুলো থেকে এই ঘাঁটিটি অনেক দূরে এবং হামলার সময় সেখানে কোনো বেসামরিক উপস্থিতি ছিল না বলে গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যেরভিত্তিতে দাবি করেছে ভারত সরকার।
ঘাঁটিটিতে হামলা চালাতে ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো মাত্র দেড় মিনিট সময় ব্যয় করেছে বলে্ এনডিটিভিকে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র।
পাকিস্তানে এটি জইশের বৃহত্তম শিবির এবং জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক ইউসুফ আজহার এটি পরিচালনা করতেন বলে খবর।
১৯৭১ সালের পর এই প্রথম ভারতীয় বিমান বাহিনীর জঙ্গিবিমানগুলো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করলো বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।