মহামারীকালে সন্তানধারণ ও প্রসবে নারী ও সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো রয়েছেই, যারা এই সময়ে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদেরও জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
Published : 10 Aug 2021, 11:14 PM
শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত বছর জানিয়েছিল, করোনাভাইরাস মহামারীতে রূপ নেওয়ার পর থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আনুমানিক ২৪ লাখ শিশু জন্ম নেবে।
গত ৭ অগাস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেশন হলে কোভিড-১৯ ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধন শেষে কোভিডে এখন নারীদের আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এই পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সেবা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও।
তাই প্রত্যেকের নিজের সচেতনতার উপর জোর দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি কোভিড ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক হালিমা আক্তার হ্যাপি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে গর্ভবতী কোভিড ইউনিটে প্রচুর ভিড়। এখানে কোনো সিট খালি নেই, একজন রোগী ছুটি না পেলে অন্য রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।”
এই গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “সন্তান জন্মদান মা ও পরিবারের জন্য আনন্দের হলেও কোভিডকালীন সময়ে গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকি বেশি।
“গর্ভাবস্থা এমনিতেই একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার, এই সময় মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। তার উপর আবার কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। তাই এই সময়ে সন্তান গ্রহণে আমরা নিরুৎসাহিত করে থাকি।”
তিনি বলেন, “নিয়মিত চেকআপ ছাড়া বাইরে না যাওয়া যাবে না, নিয়মিত হাত ধুতে হবে, বাইরের মানুষের সঙ্গে কম মেলামেশা করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে।”
এছাড়া যে কোনো শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনে আলাপ করেও স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া যেতে পারে।
প্রসবকালীন সময়ে মায়ের কোভিড হয়ে থাকলে সন্তানেরও কোভিড হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে সতর্ক করেন ডা. হালিমা।
তবে কোভিড আক্রান্ত মায়ের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তিনি।
একজন গর্ভবতী নারী যদি কোভিড আক্রান্ত হয়েই যান তবে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন, আয়রন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারেন বলে জানান ডা. হালিমা।
খাবার হিসেবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ নানা রকমের টক জাতীয় ফল, শাক-সবজি এবং ভিটামিন ডি পেতে দিনের কিছুটা সময় রোদে থাকা উপকারি।
“এছাড়াও নানা রকমের গরম মসলা দিয়ে চা পান করাকে আমরা উৎসাহিত করি। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।”
পাশাপাশি কোভিড টিকা নেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।
অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী নারীদেরও কোভিড-১৯ টিকার আওতায় এনেছে সরকার। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারছেন এই নারীরা।
গর্ভবতী মায়েদের টিকা নেওয়ার প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নূর সাঈদা বলেন, টিকা গ্রহণ মৃত্যু ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের টিকা নেওয়া আরও ‘ভালো’। এতে সন্তানও অনেকটা সুরক্ষিত থাকবে।
গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় কোভিডকালীন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি বলে সতর্ক করেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসক বলেন, “এই সময়ে দেহে নানা রকমের পুষ্টি উপাদান কম থাকায় সহজেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ও তা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই মায়েদের প্রতি এই সময়ে আরও বেশি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।”
খাদ্যাভাসে নজর দেওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চাকেও গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন ডা. নূর সাঈদা।
কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে গর্ভবতী নারীর সেবার ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, কোভিড আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের জীবন ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং যে কোনো হাসপাতালেই তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়েই ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের বিষয়টি বলা হলে তিনি বলেন, “সব সরকারি হাসপাতাল বিশেষত ঢাকা মেডিকেলে বরাবরই শয্যা সংখার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি এবং কোভিডকালীন চাপ আরও বেড়েছে। সাধারণত আউটডোরে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর নিয়মিত চেকআপ করা হয়, তাই সর্বোচ্চ সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েই সেখানে যেতে হবে।”
তবে প্রসব বা সিজার করানো এই সময়ে খানিটকা ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন ডা. নাসিমা সুলতানা।