‘হট ফ্ল্যাশ’ উপশমে নতুন ধরনের ওষুধ অনুমোদন যুক্তরাজ্যে

"এটি একটি সুইচের মত কাজ করবে। এক বা দুই দিনের মধ্যে হট ফ্ল্যাশ চলে যাবে। বহু নারীর জীবন বদলে দেবে এ ওষুধ।”

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2023, 04:25 AM
Updated : 20 Dec 2023, 04:25 AM

মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির আগে-পরে নারীর শরীরে ‘হট ফ্ল্যাশ’ নামের যে উপসর্গ দেখা দেয়, তার উপশমে নতুন এক ধরনের ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নন-হরমোনাল’ এই মেনোপজ ড্রাগ লাখো নারীর জীবনে এনে দিতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন।

‘ভেওজা’ নামের ওষুধটি ‘ফেজোলিন্যান্ট’ নামেও পরিচিত। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এ ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এবার ভেওজা অনুমোদন পেল যুক্তরাজ্যে।

নারীর শরীরের হরমোনের প্রতিক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ এই মেনোপজ। আরেকটু ব্যাখ্যায় বলা যায়, মেয়েদের ওভারিতে (ডিম্বাশয়) নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বানু থাকে। ঋতুমতি হওয়ার পর সময়ের নির্দিষ্ট চক্র মেনে প্রতিমাসে ডিম্বানু নিঃসৃত হয়।

বয়স ৫০ থেকে ৫২ পেরুলেই ডিম্বানু তৈরির কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। তখন শরীরে হরমোনের কম বা বেশি নিঃসরণের কারণে মাসিক (মেনস্ট্রুয়েশন) বন্ধ হয়ে যায়। এটাই হল মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি।

‘ইস্ট্রোজেন’ নামের একটি হরমোন নারী শরীরের এই পরিবর্তনের মূল কারণ। মেনোপজের লক্ষণগুলো শুরু হয় সাধারণ ৪৫ বছরের পর থেকে।

মেনোপজের কারণে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়; যার মধ্যে ‘আকস্মিক’ গরম অনুভব হওয়া, রাতে ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা ও মনমরা ভাব অতি সাধারণ। শরীরের এসব পরির্বতন জীবনযাত্রার মান, ব্যায়াম, ঘুম এবং উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব ফেলে।

ওই সময়টায় শরীরে যখন তখন গরম হল্কা অনুভব করলে তাকে বলে হট ফ্ল্যাশ। মেনোপজে থাকা ৭০ শতাংশ নারীকে হট ফ্ল্যাশ এর কারণে ভুগতে হলেও চিকিৎসার ভালো বা নিরাপদ উপায় খুব বেশি ছিল না।

হরমোন চিকিৎসাকে মেনোপজের ধকল সামলাতে কার্যকর ধরা হলেও যাদের স্তন বা জরায়ু ক্যান্সারে ভোগার ইতিহাস আছে, যাদের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে হরমোন চিকিৎসা সুফল দেয় না। অনেকের ক্ষেত্রে আবার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়।  

ভেওজা সরাসরি মস্তিষ্কে কাজ করে হট ফ্ল্যাশের মত উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মস্তিষ্কে নিউরোকিনিন-থ্রি নামের একটি প্রোটিন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়, যা মেনোপজে থাকা নারীদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

তবে অন্য হরমোন থেরাপির মত এটি মেনোপেজের বাকি লক্ষণ যেমন মুড সুইং বা যোনির শুষ্কতা দূর করবে না।  

যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির (এমএইচআরএ) হেলথকেয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড এক্সেস বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান বিচ গার্ডিয়ানকে বলেন, প্রত্যাশিত গুণমান ও কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়ার আগে কোনো ওষুধকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। আর নিরাপত্তার খাতিরে সব ওষুধের ক্ষেত্রেই নিয়মিত পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে যাওয়া হয়।

এমএইচআরএ বলেছে, মেনোপোজে থাকা যে নারীরা হট ফ্ল্যাশ অনুভব করছেন, এ ওষুধ তাদের তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি দেবে। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা পরীক্ষিত নয়।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্ট অধ্যাপক ওয়ালজিৎ ধিলো ভেওজাকে একটি ‘ব্লকবাস্টার’ ড্রাগ অখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেন, "এটি একটি সুইচের মত কাজ করবে। এক বা দুই দিনের মধ্যে হট ফ্ল্যাশ চলে যাবে। এই ওষুধ যে কতটা ভাল কাজ করে, তা অবিশ্বাস্য। বহু নারীর জীবন বদলে দেবে এ ওষুধ।”

আগামী জানুয়ারি থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে ভেওজা কিনতে পারবেন ব্রিটিশ নারীরা। তবে যুক্তরাজ্যে এর দাম কত হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের ভেওজা কিনতে খরচ হয় ৫৫০ ডলার।