পুনম পান্ডে: ক্যান্সার সচেতনতার যে প্রচার নিয়ে নৈতিকতার বিতর্ক

বিতর্কের সঙ্গে থাকা এ অভিনেত্রী বলেছেন, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে তিনি আসলে যা করতে চেয়েছিলেন, তা সফল হওয়ায় তিনি গর্বিত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2024, 07:58 AM
Updated : 8 Feb 2024, 07:58 AM

সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ভারতীয় অভিনেত্রী পুনম পান্ডের মৃত্যুর খবর এবং পরদিন তার নিজের পোস্টে বেঁচে থাকার খবর অনলাইন প্রচার কৌশলের নৈতিকতা নিয়ে প্রবল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি পুনম পান্ডের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে বলা হয়, ৩২ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী জরায়ু মুখ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে মারা গেছেন।

সে খবর ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে। ভারতের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমগুলো এ নিয়ে খবর প্রকাশ করে। শোক প্রকাশের ঢল নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে পরদিন পুনম আরেকটি ভিডিও পোস্টে জানান, তিনি বেঁচে আছেন। ইনস্টাগ্রামে দশ লাখের বেশি অনুসারীকে জরায়ু মুখ ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতন করতে অনলাইন ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে তিনি এ কাজ করেছেন। এরপর ভারতজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড় ।  

সিনেমার সংখ্যা হাতেগোনা হলেও বলিউডের এ অভিনেত্রী বরাবরই আলোচনায় থেকেছেন বিতর্কিত মন্তব্য আর কর্মকাণ্ডের কারণে।

২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল চলাকালে তিনি প্রথম লাইমলাইটে আসেন এই ঘোষণা দিয়ে যে, ভারতীয ক্রিকেট টিম বিশ্বকাপ জয় করতে পারলে তিনি প্রকাশ্যে নগ্ন হবেন। ভারত সেবার জয়ী হলেও পান্ডেকে এ কাজ করার অনুমতি দেয়নি বিসিসিআই।  

এবারের মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর পক্ষে পুনমের যুক্তি, “হঠাৎই আমরা সবাই জরায়ু মুখ ক্যান্সার নিয়ে কথা বলছি তাই না?”

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে তিনি আসলে যা করতে চেয়েছিলেন, তা সফল হওয়ায় তিনি গর্বিত।

জরায়ু মুখ ক্যান্সারকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ প্রথম দিকে এর কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। ভারতীয় নারীরা স্তন ক্যান্সারের পর জরায়ু মুখ ক্যান্সারেই বেশি আক্রান্ত হন। এ ক্যান্সারে প্রতি বছর মারা যান প্রায় ৭৭ হাজার নারী।

তবে এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকার মাধ্যমে জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। নারীদের নিয়মিত সার্ভিকাল ক্যান্সারের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এ টিকা সব ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী এইচপিভি স্ট্রেইন থেকে রক্ষা করে না।

পুনম পান্ডের ভুয়া মৃত্যুর খবর ছড়ানোর আগের দিন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকার ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এইচপিভি টিকা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি দেননি।    

এদিকে পুনমের কাণ্ড নিয়ে দুই ভাগ হয়ে পড়েছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। একদল ‘চমকপ্রদ’ এ অনলাইন ক্যাম্পেইনের প্রসংশা করে বলছেন, এর মাধ্যমে মানুষ এখন জরায়ু মুখ ক্যান্সার নিয়ে সচেতন হবে।

আরেকদল সমালোচনায় বলছে, যারা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছে বা যারা এই রোগে পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে, তাদের প্রতি এটা ‘অসংবেদনশীল’।

পুনমের অনলাইন ক্যাম্পেইনের প্রতিক্রিয়ায় এক্স এর (টুইটার) এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মৃত্যু মজা করার বিষয় না।”

আরেকজন বিষয়টিকে বর্ণনা করেছেন ‘কষ্টকর’ হিসেবে। লিখেছেন, শৈশবে তিনি বাবাকে হারিয়েছেন; তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন। পুনমের এ কাণ্ড তার বাবার কষ্টের স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে এনেছে।

যাচাই-বাছাই ছাড়াই পুনমের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করায় অনেকে আবার সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করছেন।

এক্স এর আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “পুনম পান্ডের মৃত্যুর খবর প্রকাশের সময় কোনো ভেরিফিকেশন, কোনো ফ্যাক্ট চেক গুরুত্ব পায়নি। তিনি আজকে আবার বেঁচে উঠেছেন। এর মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোরও মৃত্যু হয়েছে।” 

এমন সমালোচনার প্রেক্ষিতে কোনো কোনো সাংবাদিক আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, পুনমের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টের পোস্টের ভিত্তিতেই তারা মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করেছিলেন।  

‍পুনমের এ ক্যম্পেইনটি তৈরি করেছিল শবাং মিডিয়া নামের একটি এজেন্সি। যারা এই প্রচরে কষ্ট পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে দুঃখ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাটি।

সেখানে বলা হয়, পুনমের মাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সে কারণে তিনি এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির গুরুত্বটা বোঝেন। আর এ ক্যান্সার ঠেকাতে যেহেতু টিকা আছে, তখন সে বিষয়ে সবাইকে যে সচেতন করতেই হবে।