সাইকেল বা স্কুটি- এই ধরনের নিজের বাহন হতে পারে গণপরিবহণ এড়ানোর পন্থা।
Published : 08 Jun 2020, 05:05 PM
যে শত্রুকে দেখা যায় তার সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়। আর যদি শত্রুকে না দেখা যায়? তাহলে? যুদ্ধ করা হবে কি করে আর অস্ত্রই বা হবে কি? ফেলুদা সিরিজের একটি সিনেমায় সংলাপ ছিল, যা বলেছিলেন গোয়েন্দা চরিত্র প্রদোশ মিত্তির- তথা ফেলুদা। তা হলে, “আমার আরেকটি অস্ত্র আছে। মগজাস্ত্র..” অর্থাৎ বুদ্ধির শান।
বর্তমানে যে যুদ্ধে এই বিশ্ববাসী তাদের খেলতে হচ্ছে এই মেধা বা বুদ্ধি দিয়েই। শত্রুর নাম ‘করোনাভাইরাস’। এই শত্রু আবার ভোল পাল্টানো শত্রু! একেক দেশে তার একেক রূপ। আবার একই দেশে অনেক রূপ। তাই অস্ত্র তথা ভ্যাকসিন বানাতে হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব।
তাহলে উপায় কী? এর সঙ্গে মানিয়ে চলা। বা এর হাতে শিকার না হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো। এজন্যই দরকার সচেতনতা।
যেমনটি সচেতন এখন শ্যামলির রিতা আক্তার। রিতা আক্তার কাজ করেন একটি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থায়। টানা দুমাসের ওপর বাসায় বসে কাজ করার পরে যখন অফিস খোলা হল তখন রিতার চিন্তা শুরু হল।
কারণ করোনাভাইরাস যেনতেন রোগ নয়। যেকারও মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে। আর তার মূল হল ‘স্পর্শ’।
রিতার বাসায় তার নিজের মা, স্বামীর মা, দুটো সন্তান আছে। স্বামীকে বের হতে হচ্ছে না। তাই চিন্তা নেই। কিন্তু তিনি কী করবেন!
তখন মনে হলো- মূল যে বিষয় সেটার সমাধার তার বাসাতেই আছে। স্কুটি!
গত বছর হঠাৎ করেই চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে স্কুটি কিনেছিলেন রিতা। ভাগ্যের ফেরে সেই বাহনই এখন স্বস্তি। কারণ স্কুটি হলে তার কোনো পাবলিক সার্ভিস নিতে হচ্ছে না। ফলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা যাবে সহজেই। রিতা স্বস্তির শ্বাস ফেলে। কারণ বাকী যা সচেতনতা তা সে জানে ভালোভাবেই। শুধু যাতায়াতে কী করে সিটের বা বাহনের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন সেটাই ছিল ভাবনা।
শুধু রিতা নয়- রিতার মতো হাজার হাজার মানুষ আজ একই দুশ্চিন্তা নিয়ে জীবন পার করছেন। সীমিত আকারে অফিস খোলার কারণে অনেককে যেতে হচ্ছে কর্মস্থলে। ফলে ঘরে বা দপ্তরে পর্যাপ্তভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলেও পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব।
এর অন্যতম কারণ বিপুল জনগোষ্ঠি। জনবহুল এই শহরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল বা বাহরে পরিভ্রমণ অলীক গল্পের মতোই।
কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এর একটা সমাধান চোখের সামনে আছেই।
কয়েকবছর আগে সাইকেল নিয়ে রীতিমত সামাজিক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে তরুণ সমাজ। স্বাস্থ্য সচেতন এই দলটি সাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা অফিসে যাতায়াত শুরু করে।
নাম করা টেলকো কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, “গাড়ি রাখার জায়গায় ভরে থাকতো সাইকেলে। যদিও রাস্তায় অসচেতনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে তার হার কমে গেছে অনেক খানিই। তবে প্রয়োজনে তা ফিরে আসতেই পারে।”
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করেছে তারমধ্যে ভ্রমণের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজে ফিরে আসা অন্যতম।
ব্রিটিশ সরকার গণপরিবহন পরিহার করে জনগণকে পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে বা নিজে গাড়ি চালিয়ে যাতায়ত করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে।
কারণ বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে “এটি সংক্রমণের প্রকোপ আরও তীব্র করতে পারে, একই পরিবহনে ভ্রমণকারী কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি যদি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তাহলে তার একার সংস্পর্শেই পরিবহনের আরও অনেকেই নতুন করে সংক্রমিত হতে পারেন।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভব-অসম্ভবের থেকেও বড় বিষয় ব্যক্তিগত সচেতনতা। যা নানান কারণেই অনুপস্থিত। ফলে রিতার মতো যারা সচেতন তারা কোনও না কোনও ভাবে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেছে নিচ্ছেন নিজেদের বাহন। সে ক্ষেত্রে দুই চাকাই অনেকের ভরসা।
আগামি দিনগুলোতে দুই চাকার ওপর নির্ভরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ পায়ে হাঁটার দূরত্ব থেকেও বেশি দূরত্বে বিশ্ববিদ্যালয় বা দপ্তর থাকাতে গতি বাড়াবে দুই চাকাই। আর নিজের বাহন বলে সংক্রমণের আশঙ্কাও কমবে অনেকখানি।
ভুলে গেলে চলবে না, করোনাভাইরাসের টিকা না আসা অবধি সচেতনতা নিজেকে রক্ষার মূল মন্ত্র।
বাঁচতে, সুস্থ থাকতে হলে নিজের পরিচ্ছন্নতা নিজেকে লালন করতে হবে। বাইরে গেলেও নিরাপদ দূরত্বে থেকে কাজ শেষে ঘরে ফিরতে হবে। কারণ ঘরে আছে আপনজন- যাদের নিরাপত্তাও রিতার মতো পরিবারের সজ্জনের হাতে।
আরও পড়ুন