প্রায় সপ্তাহ হয়ে গেল থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে। এটি বছরের প্রথম বর্ষণ ছিল না, তবে এই বৃষ্টিই জানান দিল- সাইক্লিং হানিমুন শেষ।
সারা শীতে যারা মহানন্দে সাইকেল চালিয়েছেন, তাদের হিসেবের খাতায় বেশ কয়েকটি পয়েন্ট টুকে দিয়ে গেল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ।
মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খায়- বৃষ্টিতে সাইকেলের যত্ন করব কীভাবে? সাইকেল নিজে ধুতে চাইলে কী করতে হবে, কোন কোন বিষয়গুলোর খেয়াল রাখতে হবে, লুব (লুব্রিকেন্ট এর সহজ সংক্ষিপ্ত শব্দ) কোনটা ব্যবহার করা ভালো। মোদ্দা কথা, বৃষ্টিবাদলার দিনে বিশেষ কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সাইকেল মালিকের। আসুন জবাব খোঁজার চেষ্টা করি এইসব প্রশ্নের।
বৃষ্টির আগেই কী কী পরীক্ষা করতে হবে?
টায়ার প্রেশার: বৃষ্টিতে সাইকেলটি ভেজার আগেই টায়ার প্রেশার খানিকটা কমিয়ে নিন। টায়ার কতটা প্রেশার নিতে পারে তা সাধারণত টায়ারের গায়েই লেখা থাকে। এমটিবি বা মাউন্টেইন বাইকের বেলায় সাধারণত ৩৫ থেকে ৬৫ পিএসআই প্রেশারের কথা লেখা থাকে। শুকনা দিনে যদি ৫০ পিএসআই প্রেশারে সাইকেল চালিয়ে থাকেন, বৃষ্টিবাদলার দিনে তা ৪০-এ নামিয়ে আনুন।
গ্রিজ লাগিয়ে রাখুন আগেভাগেই: বৃষ্টির লক্ষণ থাকলে বা ভেজা রাস্তায় সাইক্লিং করতে হবে এমন পরিস্থিতিতে ডিরেইলার পুলিতে পানিনিরোধী গ্রিজ লাগিয়ে রাখুন। এতে রাস্তা থেকে ছিটকে আসা পানি পুলিতে যাওয়া রোধ করবে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বেয়ারিং পর্যন্ত পানি যেন না পৌঁছায় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।
বৃষ্টির পরে যা করণীয়
বৃষ্টির পর ধোলাই: বৃষ্টিভেজা দিনে সাইকেল চালানোর পর পরিষ্কার করাটা ‘অতি জরুরি’। বিশেষ করে সাইকেলের ‘মুভেবল পার্টসগুলো’- বললেন ক্রেইগ গিটার। তবে তিনি সাবধান করে দিলেন, পরিষ্কার করার পর অবশ্যই যেন দ্রুত মুছে ফেলা হয় সাইকেল এবং যত দ্রত সম্ভব শুকিয়ে ফেলা হয়।
আবারও লুব করুন: ভেজা দিনে সাইক্লিং করে বাড়ি ফেরার পর না হয় ধুলেন। এর পরই পয়লা যত্ন হল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে পুনরায় লুব করা।
বাংলাদেশে সাইক্লিস্টদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিডিসাইক্লিস্ট। ফেইসবুকের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই সামাজিক আন্দোলনের শুরুটা যে কয়জনের হাত ধরে তাদের একজন মইনুল ইসলাম রাহাত।
বাজারে কয়েক রকমের লুব পাওয়া যায়। কোনোটা শুকনা আবহওয়ার জন্য ভালো যা ড্রাই লুব নামে পরিচিত। আবার কোনোটা ভেজা আহাওয়ার জন্য ভালো, যাকে বলা হয় ওয়েট লুব।
“বৃষ্টির দিনে ওয়েট লুব ব্যবহার করা উচিত”, বললেন বাইসাইকেলশপ বিডি’র ওয়াহিদুর রহমান। পেশাগতভাবে তিনি বিক্রয় ব্যবস্থাপক হলেও, ‘নেশাগতভাবে’ তিনি সাইকেল চালান নিয়মিতই।
টায়ার পাল্টানোর সময় বর্ষাকাল: জ্বি, টায়ার পল্টানোরও সময় আছে। ভেজা-কাদা পথে পিছলানো ঠেকাতে সবচেয়ে উপকারী বন্ধু হল টায়ারের থ্রেড বা খাঁজ কাটা অংশ। অনেকদিন চালানো হলে এই থ্রেড ক্ষয়ে গিয়ে অনেকটা সমান হয়ে যায়। শুকনা আবহাওয়ায় এটা তেমন সমস্যা না করলেও ভেজাপথে বা কাদামাটিতে এটা বিপজ্জনক। ভালো করে খেয়াল করুন আপনার সাইকেলের টায়ারে, বিশেষ করে পেছনের টায়ারের থ্রেড কতটা ক্ষয়ে গেছে। অন্তত দুই মিলিমিটার গভীর থ্রেড না থাকলে টায়ার পল্টে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে- পরামর্শ ক্রেইগ গিটারের।
বেশ কিছু কাজ কিন্তু নিজেই করা সম্ভব। বিশেষ করে যে কাজগুলোর জন্য তেমন কারিগরি জ্ঞান লাগে না, কেবল কমনসেন্স দিয়েই করা যায়, এমন। আর যে কাজগুলোয় কারিগরি জ্ঞান দরকার সেগুলোর জন্য ঝুঁকি না নিয়ে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের কাছে যান।
রাহাত পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, “বর্ষাকালে ব্রেক ও গিয়ার কেবল গ্রিজিং করা লাগে, তবে কেবলের গ্রিজিং-টা মেকানিক দিয়ে করালেই ভালো। নিজেও করা যায়। ভিডিও দেখে শিখে কয়েকবার করলে এরপর ঠিকভাবে করা যাবে।”
সবার শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। লুব বা গ্রিজিং যাই করুন না কেন, আপনার সাইকেলে যদি ডিস্ক ব্রেক থাকে তবে খুব সাবধানে কাজ করুন। বিশেষ করে যেন ডিস্কে কোনোভাবেই গ্রিজ, লুব বা অন্য কোনো তৈলাক্ত পদার্থ না লেগে যায়।