রাস্তা থেকে কেনা ঠোঙা ভর্তি আলুর চপ, পাকোড়া কিংবা মুরগির-চাপ নিয়ে বাসায় ফেরা- খুশ মনে ভাবছেন ইফতারটা জমবে বেশ! তবে একবারও কি ভেবেছেন, এসব খাবার কতটা ক্ষতি করতে পারে?
Published : 04 Jun 2017, 02:31 PM
রোজার মাসে দুপুরে পর রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই নাকে ঢোকে মুখরোচক বিভিন্ন খাবারের গন্ধ। সব ফুটপাথ যেন রেস্তোরাঁ। লোভনীয় ভাজাপোড়া খাবার থেকে চোখ ফেরানো দায়!
রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা এসব ইফতারির দোকানগুলোর মধ্যে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, টিকিয়া, পাকোড়া, ছোলা, সবজি বা শাক বড়া-ই মুখ্য। এছাড়াও বেশ কিছু দোকানে মুরগি ও গরুর কাবাব, সাস্লিক, ফ্রাই, কিমা কাবাব, জালি কাবাব ইত্যাদি পাওয়া যায়। হালিমের দোকানের সংখ্যাও খুব একটা কম নয়।
এসব দোকানে বেলা চারটা থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। চাপ বাড়াতে থাকে বিকাল পাঁচটা থেকে। পথের ধারের দোকানগুলোর মূল ক্রেতা সাধারণত স্থানীয় এলাকাবাসী।
ফুটপাথের ইফতারির চাহিদা কেমন তা যাচাই করতে গিয়ে দেখা দেখা যায়, কোনো অংশেই এই ধরনের দোকানে ইফাতারির চাহিদা কম নয়।
পূর্ব রাজাবাজার মোড়ের ইফতারি বিক্রেতা হারুন বলেন, “আমাদের বেচাকেনা খুব ভালো। কোনো কিছুই বাকি থাকে না। অনেক সময় খাবার শেষ হয়ে যায়, মানুষ এসে ফিরে যায়।”
কারা কেনেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবাই খায়, বিশেষ করে এই এলাকার মানুষজন। অনেকে আবার অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আমাদের এখান থেকে ইফতারি নিয়ে যায়।”
আরেকজন কিশোর বিক্রেতা সুমন বলেন, “এখানে অনেকগুলো হোস্টেল আছে। হোস্টেলের ছেলে মেয়েরাও এইখান থেকে ইফতারি কেনে।”
শাহাবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে ইফতারি কিনতে আসা মো. শাহীন আহমেদ বলেন, “এইসব ইফতারি খেতে মজা। তাছাড়া বাসায় সব আইটেম বানানো হয় না। তাই প্রতিদিনই কম বেশি কেনা পড়ে।”
এই সকল খাবার পুরানো তেল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো হয় কিনা তা জানতে চাইলে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনের ইফতারি বিক্রেতা মনির বলেন, “আমরা খুব বেশি পুরানো তেল ব্যবহার করি না। আর খাবার এই দোকানেই বানানো হয়। সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।”
তবে এই প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখা যায় কড়াইয়ে পোড়া তেল ও খাবারের উপর মাছির আনাগোনা।
অস্বাস্থ্যকর জেনেও এসব খাবারের প্রতি এত ঝোঁক কেনো? জানতে চাইলে একজন ক্রেতা মনোয়ার বলেন, “জানি এইসব খাবার বাসী-পোড়া তেল দিয়ে তৈরি। তারপরও কিনতে হচ্ছে। কারণ আমার বাসায় সবাই চাকরি করে। আলাদাভাবে ইফতারি তৈরি করা সবসময় হয় না। তাছাড়া বাচ্চারা এইসব খেতে বেশ পছন্দ করে। তাই প্রতিদিনই রাস্তা থেকে কিছু না কিছু কেনা হয়।”
পুরান ঢাকার ইফতারির চাহিদা বরাবরই বেশি, স্বনামধন্য কিছু খাবারের দোকানের পাশাপাশি রাস্তার ধারের অন্যান্য দোকানের বিক্রিবাট্টাও চোখে পড়ার মতো। ইফতারির পদের ভিন্নতা থাকায় বরাবরই এখানে ভিড় লেগে থাকে।
চাঙ্খারপুলে ইফতার কিনতে আসা একজন গৃহিণী আরিফা বলেন, “মাঝেমধ্য এখান থেকে ইফতার কেনা হয়। সচরাচর ইফতারি বাসাতেই বানাই। তবে বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। ওরা চিকেনের আইটেম আর হালিম খেতে পছন্দ করে। তাই মাঝে মধ্যে এখান থেকে ইফতারি নেই।”
“রাস্তার ইফতারি আমি পছন্দ করিনা। তবে এখানকার কয়েকটি বড় আর ভালো দোকান আছে। যারা রোজার সময় আলাদা ইফতারি তৈরি করে। আমি কিনলে ওইসব দোকান থেকেই কিনি।”
তিনি আরও বলেন, “এসব খাবার খেলে যে কোনো সময় পেটের গুরুতর অসুখ হতে পারে। খাবারের বিষক্রিয়া হলে বদহজম, বমি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া বেশির ভাগ দোকানেই পুরানো তেলে খাবার রান্না করা হয় যা শরীর, ত্বক, চুল সবকিছুর জন্যই ক্ষতিকারক। তাই খুব প্রয়োজন না হলে এইসকল খাবার খাওয়া ঠিক নয়।”
তারপরও বাঙালির রসনার কাছে হার মানে যুক্ততর্ক আর বাস্তবতা। এ কারণেই হয়ত ফুটপাথে খাবার-দোকানের যেমন কমতি নেই তেমনি ক্রেতারও অভাব হয় না।