দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা পাওয়া সহজ করতে প্রত্যেকটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।
Published : 17 Sep 2019, 03:13 PM
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিভাগ রয়েছে আটটি। এই আটটির সবগুলোর বিভাগীয় সদরেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে আরও আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল হতে যাচ্ছে দেশে।
‘বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্যয়ে ২০২২ সালের মধ্যে তা নির্মাণ করবে।
শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কারও যদি ক্যান্সার রোগ হয়, তা শুরুতেই যেন নির্ণয় করা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, সেই উদ্দেশ্যেই এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
ক্যান্সার চিকিৎসায় বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
এই প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করা হয়।
তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ ৫০ হাজার লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর এক লাখ ৮ হাজার লোক ক্যান্সারে মারা যায়। এ সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে।
ঢাকার মহাখালীতে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে শয্যার সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে ইতোমধ্যে। যেখানে রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্রপাতিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার বাইরে বগুড়া মেডিকেল হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সর্বাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন সংযুক্ত করা হয়েছে।
তবে বিভাগীয় পর্যায়ে আটটি মেডিকেল কলেজের সবগুলোতে পূর্ণাঙ্গভাবে ক্যান্সার বিকিরণ চিকিৎসা, কেমোথেরাপি ব্যবস্থা চালু নেই।
বেসরকারি কয়েকটি ক্যান্সার হাসপাতাল থাকলেও সেগুলোর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় গরিব মানুষ সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না বলেও উল্লেখ করা হয় প্রকল্প প্রস্তাবে।
এতে বলা হয়, “অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে প্রতি ১০ লাখ লোকের জন্য একটি করে ক্যান্সার হাসপাতালের প্রয়োজন। সে হিসাবে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১৬০টি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতালের প্রয়োজন।”
“এমন পরিস্থিতিতে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে,” বলেন মন্ত্রী মান্নান।
মঙ্গলবারের বৈঠকে এটিসহ ৮ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ের আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আসবে, বাকি ৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
অন্য প্রকল্পগুলো
>> ‘ময়মনসিংহ (রঘুরামপুর)-ফুলপুর-নকলা-শেরপুর (আর-৩৭১) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প। ব্যয় ৮৫৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
>> ‘রাজশাহী-নওহাটা-চৌমাসিয়া সড়কের বিন্দুর মোড় হতে বিমান বন্দর হয়ে নওহাটা ব্রীজ পর্যন্ত পেভমেন্ট ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প। ব্যয় ৩২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
>> ‘রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় হতে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। ব্যয় ১২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
>> ‘আশ্রয়ণ-২ শীর্ষক’ প্রকল্প। ব্যয় ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
>> ‘জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ গবেষণা’ প্রকল্প। ব্যয় ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
>> ‘স্ট্রেংদেনিং মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন ক্যাপাবিলিটিজ অব আইএমইডি (এসএমইসিআই)’ প্রকল্প। ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
>> ‘ভারতের ঝাড়খন্ড হতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি করার লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ’ প্রকল্প। ব্যয় হবে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।