চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে টাকা ধার করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল, তার প্রায় পুরোটা পাঁচ মাসেই নিয়ে ফেলেছে।
Published : 01 Jan 2021, 03:10 PM
পুরো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল বাজেটে, সেখানে জুলাই-নভেম্বর সময়েই ১৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকা নেওয়া হয়ে গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার জুলাই-নভেম্বর সময়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, এই পাঁচ মাসে ১৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
এই অংক গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২৬ শতাংশ বেশি। আর পুরো অর্থবছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। বারো মাসে অর্থাৎ জুলাই-জুন সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
এ বছর নভেম্বরে ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের নভেম্বরের চেয়ে দশ গুণেরও বেশি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ খাত থেকে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল সরকারকে।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।
বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
তাছাড়া গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপ করা হয়। এতভাবে চেষ্টা করার পরও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জায়েদ বখত বলেন, মহামারীর মধ্যে অর্থ সঙ্কটে পড়ে অনেকে যেখানে লোকসান দিয়ে মেয়াদ পূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গাচ্ছেন, তারপও কীভাবে নিট বিক্রি ক্রমাগত বাড়ছে, তা তার কাছে স্পষ্ট নয়।
“এমনটা হতে পারে যে, বেশি সুদ পাওয়ায় যার কাছে যা সঞ্চয় আছে তা দিয়ে সবাই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্র কিনছে। আবার এই যে বেশি বেশি রেমিটেন্স আসছে, তার একটি অংশও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হতে পারে।”
এ পরিস্থিতিতে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা কমাতে পেনশনার ও পরিবার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন জায়েদ বখত।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কিন্তু জুন মাসে অস্বাভাবিক বিক্রির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছিল সরকারকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: