সঞ্চয়পত্র: সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছেই

করোনাভাইরাসের মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে, যার ফলে সরকারের ঋণের বোঝাও বাড়ছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2020, 01:53 PM
Updated : 30 Oct 2020, 01:53 PM

করের হার বাড়িয়ে, কড়াকড়ি আরোপ করেও ‘সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে পরিচিত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ঠেকাতে পারছে না সরকার।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার যে লক্ষ্য ধরেছিল, তার প্রায় ৬০ শতাংশ তিন মাসেই নেওয়া হয়ে গেছে।

এভাবে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে গেলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে এই খাত থেকে চার হাজার ২০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে, যা গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছে, তার ১১ হাজার ৬৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা তিন মাসেই নিয়ে ফেলেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে ১১ হাজার ৬৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অংক গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের আড়াই গুণ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর অগাস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা এক মাসের হিসাবে গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ফাইল ছবি

এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৬০৬ কোটি ১০ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এবার সেপ্টেম্বরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ৩২৭ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে মোট ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এভাবে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে গেলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় চাপ পড়বে।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এর দুটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ায় সঞ্চয়পত্র কেনাও বেড়েছে। সুদের হার সবচেয়ে বেশি হওয়ায় হয়তো বেশি বিনিয়োগ করছে মানুষ।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ ধরেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

কিন্তু জুন মাসে অস্বাভাবিক বিক্রির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে।