সঞ্চয়পত্র: গত অর্থবছরের বেশি ঋণ ৪ মাসেই

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমলেও সঞ্চয়পত্র থেকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে; চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যত ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা গত অর্থবছরের চেয়েও বেশি।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2020, 04:29 PM
Updated : 4 Dec 2020, 05:10 PM

জুলাই-অক্টোবর সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা গত অর্থবছরের (জুলাই-জুন) পুরো সময়ের চেয়ে এক হাজার ২১৪ কোটি টাকা বেশি।

আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল সরকার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন গুণ ঋণ নিয়েছে সরকার।

আর বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ ঋণ এই চার মাসেই নিয়ে ফেলেছে সরকার।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত অর্থবছরে এই খাত থেকে মোট ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছিল।

মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে, যার ফলে এই খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণও বাড়ছে।

করের হার বাড়িয়ে, কড়াকড়ি আরোপ করেও ‘সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে পরিচিত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ঠেকাতে পারছে না সরকার।

সর্বশেষ অক্টোবরে এ খাত থেকে চার হাজার ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে, যা গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৮২২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই অক্টোবরে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছে। আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে মাত্র ৯৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মহামারীর এই কঠিন সময়ে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তবে দুটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে।

“প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ায় এর একটি অংশ কেউ কেউ সঞ্চয়পত্র কিনে থাকতে পারেন। আর সুদের হার বেশি হওয়ায় যার সামান্য সঞ্চয় আছে তা দিয়েও সঞ্চয়পত্র কিনছে।”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৬৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি  সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

কিন্তু মহামারীর মধ্যেও অর্থবছরের শেষ মাস জুনে অস্বাভাবিক বিক্রির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছিল সরকার। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন: