বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা (ইটিপি) কার্যকর না করে তরল বর্জ্য নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতিসাধনের দায়ে চিটাগং এশিয়ান পেপার মিলসকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
Published : 10 Jun 2019, 04:40 PM
এছাড়া এক মাসের মধ্যে ইটিপি কার্যকর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সোমবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন।
তিনি বলেন, তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) অকার্যকর রেখে কারখানা চালানো এবং কারখানার ভেতরে একটি প্রাকৃতিক পুকুরে রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য সংরক্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
“পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি সাধন করায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ধারা-৭ অনুসারে প্রাথমিকভাবে ‘এনভায়রনমেন্টাল ড্যামেজ এসেসমেন্ট’ করে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
“পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে ইটিপি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করতে এবং প্রাকৃতিক পুকুরে রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য সংরক্ষণ করা হবে না মর্মে ২৩ জুনের মধ্যে অঙ্গীকারনামা দিতে এশিয়ান পেপার মিলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এসব নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এহছানুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উৎপাদনের জন্য যতক্ষণ প্রয়োজন, ততক্ষণ তারা এটিপি চালু রাখেন। বর্জ্য শোধনের ন্যূনতম যে মান রাখতে হয় তাও রাখার চেষ্টা করা হয়।
“কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, বর্জ্য পানির ক্ষেত্রে সেই মাত্রা বজায় রাখা হয়নি।”
এর আগে ৩০ মে হালদা নদীর রাউজান অংশে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মুক্তাদির হাসান বলেন, গত ২৫ মে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শক দল ওই কারখানা পরিদর্শন করে।
পরিদর্শনে কারখানাটিতে ইটিপির জন্য একটি ভবন থাকলেও তা কার্যকর না থাকা এবং সেখান থেকে রাসায়নিকের নমুনা সংগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন মোয়াজ্জম হোসাইন। এরপর সোমবার শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকদণ্ডী ইউনিয়নের নন্দীরহাট এলাকায় চিটাগাং এশিয়ান পেপার মিলস অবস্থিত।
কারখানাটির কাছেই মরা ছড়া খাল। এটি আবার ডোম খাল, মাদারি খাল ও কাটাখালি খালের সঙ্গে সংযুক্ত। এর মধ্যে মাদারি ও কাটাখালি খাল উপজেলার মার্দাশা এলাকায় হালদা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কারখানাটির বর্জ্য এসব খালের মাধ্যমেই হালদায় গিয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারি বর্ষণের রাতে এশিয়ান পেপার মিল থেকে বর্জ্য খালে ফেলা হয়। এসব বর্জ্যের কারণে সংলগ্ন খালের পানি শুরুতে কালচে ও পরে লাল বর্ণ ধারণ করে।
২৫ মে রাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। সে রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা।
২৬ মে সকালে মাদারি খালের লালচে পানি দেখতে পেয়ে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিত প্রতিবেদন দেন হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়ার অভিযোগ, ‘বৃষ্টির অপেক্ষায়’ থাকা এশিয়ান পেপার মিল কর্তৃপক্ষ কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং কাগজের উচ্ছিষ্ট অংশ খালে ফেলে। এতে মরা ছড়া খালটি এখন মৃতপ্রায়।