হালদা দূষণ: এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

বর্জ্য ফেলে সংলগ্ন খাল ও হালদা নদীতে দূষণ ঘটানোয় চট্টগ্রামের এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2019, 01:34 PM
Updated : 30 May 2019, 01:39 PM

বৃহস্পতিবার রাউজানের ছাত্তারঘাট এলাকায় ‘হালদা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্প পরিদর্শন এবং স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়’ এ নির্দেশ দেন সচিব কবির বিন আনোয়ার।

এসময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রোকন উদ দৌলা উপস্থিত ছিলেন।

রোকন উদ-দৌলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দা এবং সংশ্লিষ্টরা আমাদের বিষয়টি জানায়। এশিয়ান পেপার মিলে ইটিপি নেই।

“পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইনকে অনুরোধ করা হয়েছে মামলা করতে। বিষয়টি সমন্বয় করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সচিব মহোদয়।”

মোয়াজ্জেম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতিরিক্ত সচিব মহোদয় আমাকে ফোন করেছিলেন। এশিয়ান পেপার মিলের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান।

“কিছুদিন আগে বিষয়টির দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়। এরপর আমরা ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষাগারে সেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিওডি, সিওডিসহ বেশিরভাগ মানমাত্রাই নেতিবাচক। পরিদর্শক দল চলতি সপ্তাহে পরিদর্শনও করেছে।”

এ বিষয়ে শুনানির জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, ১০ জুন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

“কয়েক মাস আগে আমি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি তাদের ইটিপি কার্যকর নয়। সেটা একটা ভবনের কাঠামো শুধু। সেখান থেকেও নমুনা নিয়েছিলাম।”

২৫ মে রাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। সে রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা।

২৬ মে সকালের পরিস্থিতি জানিয়ে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন দেখি মাদারি খালের পানি লালচে হয়ে আছে। আমার সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ছিলেন।

“এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত প্রতিবেদন গতকাল জমা দিয়েছি। তাদের ইটিপি কার্যকর নয়। তারা ভারি বর্ষণের অপেক্ষায় থাকে। বৃষ্টি হলেই বর্জ্য সংলগ্ন খালে ফেলে দেয়। পানি সম্পদ সচিব পরিবেশ আইনে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ার রাতেই এশিয়ান পেপার মিল থেকে বর্জ্য ফেলা হয়।

“কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা মাদারি খাল ও কাটাখালি খাল হয়ে হালদা পৌঁছে যায়। গত কয় বছরে মাদারি খালের মাছ কয়েকবার মরে ভেসে উঠেছে। ১০-১২ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে।”

মনজুরুল কিবরিয়া জানান, এশিয়ান পেপার মিল থেকে কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং কাগজের উচ্ছিষ্ট অংশ খালে ফেলা হয়। এতে সংলগ্ন মরা ছড়া খালটি এখন মৃত প্রায়। এসব আর্বজনা খালে জমে এমোনিয়া উৎপাদন হয়, যা ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ায়। 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকদণ্ডী ইউনিয়নের নন্দীরহাট এলাকায় ‘চিটাগাং এশিয়ান পেপার মিলস (প্রাইভেট) লিমিটেড’ নামের কারখানাটি অবস্থিত।

কারখানাটির কাছেই মরা ছড়া খাল। মরা ছড়া খালটি স্থানীয় আরো কয়েকটি খালের মাধ্যমে ডোম খাল, মাদারি খাল ও কাটাখালি খালের সাথে সংযুক্ত।

এরমধ্যে মাদারি খাল ও কাটাখালি খাল উপজেলার মার্দাশা এলাকায় হালদা নদীর সাথে যুক্ত। এসব খালের বর্জ্য পানির সাথে হালদায় গিয়ে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারি বর্ষণের রাতে এশিয়ান পেপার মিল থেকে বর্জ্য খালে ফেলা হয়। এসব বর্জে্যর কারণে সংলগ্ন খালের পানি শুরুতে কালচে বর্ণ ও পরে লাল বর্ণ ধারণ করে।