টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা তার হয়েছে আলো ঝলমলে। এবার টেস্টের আঙিনায় পা রেখেও মুগ্ধতা উপহার দিলেন ডেভন কনওয়ে। সাদা পোশাকে অভিষেক রাঙালেন ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিতে। তার দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে শক্ত ভিত পেল নিউ জিল্যান্ড।
Published : 03 Jun 2021, 12:23 AM
টম ল্যাথাম, কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলরের ব্যর্থতার দিনে দলকে দারুণ দক্ষতায় এগিয়ে নেন কনওয়ে। সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ২৪৬।
টেস্টের আঙিনায় নিজের প্রথম দিনে দলের ইনিংস শুরু করতে নেমে কনওয়ে অপরাজিত ১৩৬ রান করে। ২৪০ বলের ইনিংসটি গড়া ১৬ চারে।
ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে টেস্ট অভিষেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটিই। পেছনে পড়েছে ১৯৯৬ সালে সৌরভ গাঙ্গুলির খেলা ১৩১ রানের ইনিংস।
নিউ জিল্যান্ডের হয়ে দেশের বাইরে টেস্ট অভিষেকে সর্বোচ্চ ইনিংসও এখন কনওয়ের। ২০১০ সালে আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে উইলিয়ামসনের ১৩১ ছিল আগের সেরা।
নড়বড়ে অবস্থা থেকে নিউ জিল্যান্ডকে এ দিন শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায় হেনরি নিকোলসের সঙ্গে কনওয়ের জুটি। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটির রান ১৩২। নিকোলস আছেন ফিফটির খুব কাছে।
প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের সেরা পারফরমারও একজন অভিষিক্ত। কিউইদের তিন উইকেটের দুটিই নেন অভিষিক্ত পেসার অলি রবিনসন। ইংল্যান্ডের আরেক অভিষিক্তি, কিপার-ব্যাটার জেমস ব্রেসি অবশ্য কোনো শিকার পাননি। ইংল্যান্ডের ৬৯৮ ও ৬৯৯তম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন এই দুজন।
ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট (১৬১) খেলার রেকর্ডে এ দিন অ্যালেস্টার কুককে স্পর্শ করেন জেমস অ্যান্ডারসন। তাকেসহ স্বাগতিকরা একাদশ সাজায় চার পেসার নিয়ে। ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো দেশের মাঠে তাদের একাদশে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার। এই ম্যাচ দিয়ে ২০১৯ অ্যাশেজের পর ইংল্যান্ডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে দর্শক ফেরে মাঠে।
৬৫৪ দিন পর লর্ডসে টেস্ট ফেরার দিনে বুধবার টস জিতে ব্যাটিং নেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন।
উইকেটে কিছুটা ঘাসের ছোঁয়া ছিল সকালে, তবে ব্যাটিংয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো। নিউ জিল্যান্ডের শুরুটাও হয় বেশ ভালো। প্রথম ঘণ্টায় ১৩ ওভারে ৪৭ রান যোগ করেন দুই ওপেনার ল্যাথাম ও কনওয়ে।
এর একটু পরই ৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ল্যাথামের বিদায়ে। রবিনসনের লেংথ বলে ব্যাটের কানায় লেগে বাঁহাতি ওপেনার বোল্ড হন ৫৭ বলে ২৩ রান করে। প্রথম টেস্ট উইকেটের উচ্ছ্বাসে ভাসেন ২৭ বছর বয়সী রবিনসন।
বিরতির পর প্রথম ওভারেই উইলিয়ামসনকে বিদায় করে দেন অ্যান্ডারসন। দেরিতে খেলা এবং সফট হ্যান্ড, উইলিয়ামসনের শক্তির জায়গাই এবার কাল হয় তার জন্য। ব্যাটে লেগে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে।
আগের চার টেস্ট ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি করা (দুটি ডাবল) কিউই অধিনায়ক এবার থামেন ৩৩ বলে ১৩ রান করে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক হাজার উইকেটের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যান অ্যান্ডারসন।
একটা পর্যায়ে কনওয়ের রান ছিল ৫৩ বলে ৪১। পরে তিনি গুটিয়ে নেন নিজেকে। ফিফটি পূর্ণ করেন ৯১ বলে। ১৯৯৬ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের পর এই প্রথম লর্ডসে টেস্ট অভিষেকে ফিফটি করলেন সফরকারীর কোনো ব্যাটসম্যান।
অভিজ্ঞ টেইলর ফেরেন থিতু হয়ে। রবিনসনের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি (৩৮ বলে ১৪)। নিউ জিল্যান্ডের রান তখন ৩ উইকেটে ১১৪।
এরপর কনওয়েকে দারুণ সঙ্গে দেন নিকোলস, জমে যায় তাদের জুটি। কনওয়ে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে।
রবিনসনকে চার মেরে তিনি পৌঁছান নম্বইয়ের ঘরে। এই পেসারের পরের ওভারে ৯৮ থেকে ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পা রাখেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়, ১৬৩ বলে।
অভিষেক টেস্টে লর্ডসে সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান তিনি, তৃতীয় সফরকারী ব্যাটসম্যান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কনওয়ের সেঞ্চুরি হলো ১৯টি, তবে ওপেনিংয়ে নেমে এটিই প্রথম। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশিরভাগ সময়ই তিনি ব্যাট করেন তিন নম্বরে।
নিকোলস শুরু থেকেই খেলেন যথারীতি ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে। দ্বিতীয় নতুন বলেও দুই ব্যাটসম্যানকে তেমন ভাবাতে পারেননি অ্যান্ডারসন, ব্রডরা। ১৪৯ বলে ৩ চারে ৪৬ রানে দিন শেষ করেন নিকোলস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ২৪৬/৩ (ল্যাথাম ২৩, কনওয়ে ১৩৬*, উইলিয়ামসন ১৩, টেইলর ১৪, নিকোলস ৪৬*; অ্যান্ডারসন ২০-৫-৫৫-১, ব্রড ২০-৫-৪২-০, রবিনসন ১৬-৪-৫০-২, উড ১৮-৬-৪৯-০, রুট ১২-১-৩৭-০)।