লো-স্কোরিং ম্যাচে শেষ ওভারে উত্তেজনাপূর্ণ সমাপ্তি। সেই ম্যাচ জয়ের তৃপ্তি ছিল তামিম ইকবালের কণ্ঠে। মাশরাফি বিন মুর্তজার কণ্ঠে হারের হতাশা। তবে একটি জায়গায় একদম মিলে গেল দুজনের সুর আর ভাবনা। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে হতাশ, বিরক্ত, ক্ষুব্ধ দুই অধিনায়কই।
Published : 02 Dec 2017, 05:44 PM
চট্টগ্রামের রান উৎসবের পর ঢাকায় ফিরেই বিপিএল যেন উল্টোরথের যাত্রী। টি-টোয়েন্টির সঙ্গে বেমানান রকম মন্থর উইকেট। তার চেয়ে ভয়াবহ অসমান বাউন্স। গুড লেংথ থেকে কোনো বল লাফিয়ে মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, তো একই জায়গা থেকে আরেকটি বল যাচ্ছে হাঁটুর নিচ দিয়ে। শট খেলা বহুদূর, উইকেট টিকে থাকাই কঠিন।
দুই দলের ব্যাটিংয়েও সেটিরই প্রতিফলন। ৯৭ রানে গুটিয়ে গেল রংপুর রাইডার্স, এবারের বিপিএলে যেটি একশর নিচে প্রথম স্কোর। সেই রান তাড়ায়ও ধুঁকতে ধুঁকতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জিতল শেষ ওভারে গিয়ে।
চট্টগ্রামে দারুণ সব ক্রিকেট উইকেটের স্মৃতি এখনও টাটকা। মিরপুরের উইকেট বিশ্রাম পেয়েছে ১০ দিনের মতো। এর পরও উইকেটের এই আচরণ বিস্মিত করেছে দুই দলকেই।
ম্যাচ শেষে দুই অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনের বেশিরভাগ জুড়েই থাকল উইকেট প্রসঙ্গ। মাশরাফির মতে, টি-টোয়েন্টি এমন উইকেট গ্রহণযোগ্য নয়।
“আমার মনে হয় আপনারা সবাই খেলা বোঝেন। আসলে এই ধরনের উইকেটে টি-টোয়েন্টি খেলা খুব কঠিন। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম থেকে আসার পর এখানে এ ধরনের উইকেট পাওয়া, অবশ্যই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই উইকেট ‘হরিবল’ বলে নিজের ভাবনা জানিয়ে দিয়েছেন তামিম। সংবাদ সম্মেলনেও লুকোছাপার ধার ধারলেন না। উইকেটের প্রশ্নে কুমিল্লা অধিনায়ক ছুড়ে দিলেন পাল্টা প্রশ্ন।
“আমার প্রশ্ন আপনাদের কাছে, সবসময় একটি অজুহাত দেওয়া হয় যে মিরপুরে অনেক খেলা হয়। এবার তো ১০ দিন খেলা হলো না। এর পর এমন উইকেট…এটা সে (কিউরেটর) উত্তর দিতে পারবে ভালো।”
“আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগছে, এত দর্শক এল মাঠে। কিন্তু এসে দেখল একদল ৯৭ করছে, আরেক দলের সেটি করতে শেষ ওভার পর্যন্ত যেতে হয়েছে, দর্শকের জন্য এটি হতাশাজনক। আমরা সবাই চাই বিপিএল পরের ধাপে যাক। কিন্তু এ রকম জঘন্য উইকেটে খেলা হলে তো হতাশাজনক। কি কারণে এরকম উইকেট বানানো হচ্ছে, আমার ধারণা নেই।”
ধারণা নেই মাশরাফিরও। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের শুরু থেকেই খেলে ও দেখে আসছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। কিন্তু উইকেটের এরকম আচরণের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
“আমি জানি না সমস্যাটা কি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটা খুঁজে বের করা উচিত। মাটিতে সমস্যা যদি থাকে বা প্রস্তুতিতে সমস্যা, যেটিই হোক, সমস্যা বের করা উচিত। কারণ টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে এসে সবাই চায় ভালো উইকেটে খেলতে। টসে হেরেই ম্যাচ হেরে গেছি, এই অনুভূতি নিয়ে কেউ মাঠে আসতে চায় না।”
“এমনিতে ঢাকার উইকেটে টস হারলেই ব্যাটিং করতে হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। কেউ জানে না কত রান নিরাপদ। তারপর যদি গিয়ে দেখি উইকেট এমন আচরণ করছে, তাহলে যে কোনো দলেরই ড্রেসিং রুম দ্বিধায় পড়ে যায়।”
তামিম তুলে আনলেন মাঠ নিয়ে সাম্প্রতিক আরেকটি প্রসঙ্গও। সংস্কারের পর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আউটফিল্ডের অবস্থাও হতাশাজনক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টের পর আইসিসি এই আউটফিল্ডকে ‘বাজে’ বলে রেটিং দিয়েছিল। এখন অতটা বাজে না থাকলেও হয়নি খুব ভালোও। আগের চোখ জুড়ানো সবুজ গালিচা নেই, আউটফিল্ড এখন বাদামি। আগের মতো দ্রুতগতিরও নয়। তামিম ক্ষোভ জানালেন এটি নিয়েও।
“আমার কাছে মনে হয় একটা সুন্দর আউট ফিল্ডকে ইচ্ছে করে খারাপ করে দেওয়া হলো। আগে যে ঘাস ছিল, আউটফিল্ড খুব দ্রুতগতির ছিল। দেখতেও সুন্দর ছিল। এখন সত্যি বলতে দেখতেও ভালো লাগে না।”
“আমাদের প্রধান নির্বাহীকে বলতে শুনেছি, সময় পেলে ঘাস ভালো হবে। আশা করি সময়ের সঙ্গে ভালো হবে। কিন্তু সময় তো পেয়েছেও।”
তামিম নিজ থেকে টেনে আনলেন চট্টগ্রামের উইকেটকে। চট্টগ্রামের ছেলে হলেও এবার ঘরের মাঠের উইকেট তার জন্য ছিল আনন্দময় বিস্ময়।
“আমি খুবই বিস্মিত চট্টগ্রামের উইকেটে। চট্টগামে এত ভালো উইকেট আগে কখনও দেখিনি। চট্টগ্রামে অনেক দিন ধরেই খেলি। কিন্তু এবার যে উইকেটে খেলে এলাম, সেটি অসাধারণ টি-টোয়েন্টি উইকেট।”
চট্টগ্রাম জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবুর বানানো উইকেট আগেও প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে মিরপুরের উইকেট গত কয়েক বছরে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবারই। ২০১৫ বিপিএল জুড়ে আলোচনায় ছিল মিরপুরের উইকেট। গত বিপিএলে ছিল ভালো-মন্দ মিশিয়ে। সম্প্রতি সমালোচনার স্রোতে যোগ হয়েছে আউটফিল্ডের দুর্দশা। মিরপুরের শ্রীলঙ্কান কিউরেটর গামিনি সিলভাকে সরাসরিই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তামিম।
“তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করা উচিত। এই ধরনের উইকেট আসলে টুর্নামেন্টের জন্য ভালো নয়। যারা খেলে, যারা দেখে, মাঠে যারা থাকে, কেউই মজা পায় না। এমন নয় যে এই মাঠে আগে রান হয়নি। রান ঠিকই হয়েছে। কিন্তু বিপিএল এল শুধু এ রকম হয়ে যায়।”