সকালটা ছিল ঝলমলে রোদ। দুপুর থেকেই আকাশ মেঘলা। বিকেলে টুপটাপ বৃষ্টি। শরীর জমিয়ে দেওয়া হিম বাতাস; ‘টিপিক্যাল’ নিউ জিল্যান্ড আবহাওয়া। কিন্তু হ্যাগলি ওভালে তখন শুধুই বাংলাদেশ! ২২ গজে চলছে সাকিবের-রাজত্ব। কে বলবে, কন্ডিশন বিরুদ্ধ আর উইকেট সিমিং ও বাউন্সি! যেন বাংলাদেশেরই আপন আঙিনা।
Published : 21 Jan 2017, 10:59 AM
তিন পেসার আগুন ঝরালেন দিনভরই। বিবর্ণ প্রথম স্পেলের পর মেহেদী হাসান মিরাজও উজ্জ্বল। বোলারদের এমন দিনেই কিনা প্রায় উধাও হয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। শেষ বিকেলে হয়তো ভাবলেন, এবার কিছু না করলেই নয়!
ক্রাইস্টচার্চের আকাশের কান্না যখন শুরু, সাকিবের হাত ধরেও এলো এক পশলা উইকেট বৃষ্টি। ৯ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে এলোমেলো করে দিলেন কিউই ব্যাটিং। বিকেল পর্যন্ত সমতায় থাকা দিনটি হয়ে গেল শুধুই বাংলাদেশের।
বৃষ্টির বেগ বাড়ায় থামল বাংলাদেশের ছন্দ। নিউ জিল্যান্ড তখন ৭ উইকেটে ২৬০। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেকে পিছিয়ে ২৯ রান। ১৯ ওভার আগে শেষ হয়েছে দিনের খেলা।
সাকিব ঝলকের আগে দিনজুড়ে আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের তিন পেসার। এখানেও বোলিং ফিগার বলছে না পুরোটা। বলছে না বাংলাদেশের তিন পেসারই কতটা ভুগিয়েছেন কিউই ব্যাটসম্যানদের।
অসাধারণ প্রথম স্পেলে দিনের সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। ৭ ওভারের প্রথম স্পেলে ২৫ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। কিন্তু ভাগ্যকে একটু পাশে পেলে পেতে পারতেন গোটা দুই-তিন উইকেট।
আরেকপাশে আবার শুরু মিরাজের স্পিনে এবং যথারীতি ক্যাচ মিস। জিত রাভাল ২ রানে বেঁচে যান স্লিপে মাহমুদউল্লাহর হাতে। ১২ রানে বেঁচে যান আরও দুবার। একবার হতে পারতেন রান আউট। পরে স্লিপে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া সাব্বিরের।
তিন বার বেঁচে গিয়েও রাভাল ফিরেছেন ১৬ রানে। কামরুল আগের ম্যাচে নিজের প্রথম বলেই নিয়েছিলেন উইকেট। এবার দ্বিতীয় বলে। এক বল বেশি লাগল বলেই কিনা, পুষিয়ে দিলেন জোড়া শিকারে। দ্বিতীয়টি আবার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত শিকার। অফ স্টাম্পে পিচ করে বেরিয়ে যাওয়া নিখুঁত আউট সুইঙ্গারে বিদায় কেন উইলিয়ামসন।
১ রানে রস টেইলরকেও ফেরাতে পারতেন কামরুল। ক্যাচ ছেড়েছেন সেই মাহমুদউল্লাহ। রুবেল উইকেট না পেলেও বল করছিলেন দারুণ। ততক্ষণে থিতু হওয়া টম ল্যাথামকে নাড়িয়ে দেন বাউন্সারে বল হেলমেটের গ্রিলে লাগিয়ে।
ল্যাথাম ও টেইলর মিলে তবু কাটিয়ে দেন প্রথম সেশনের বাকিটা। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে একটু যেন কমলো বোলিংয়ের ধার। তাতে আলগা কিউইদের ফাঁস। তৃতীয় উইকেটে ল্যাথাম ও টেইলরের ১০৬ রানের জুটি।
উইকেট নেওয়ার মত অসংখ্য সুযোগ সৃষ্টি করেও না পাওয়া তাসকিন শেষ পর্যন্ত পেলেন আপাত নিরীহ এক বলে। অফ স্টাস্পের বাইরে কাট করতে গিয়ে একটু বাড়তি লাফানো বলে ৬৮ রানে আউট ল্যাথাম।
থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর ধাক্কাও কিউইরা সামলে উঠেছিল হেনরি নিকোলস ও মিচেল স্যান্টনারের জুটিতে। বেশ কবার আউট হতে হতেও বেঁচে গিয়ে দুজন গড়েন ৭৫ রানের জুটি। মনে হচ্ছিলো ভালোভাবেই লিড নিয়ে নেবে নিউ জিল্যান্ড। তখনই দৃশ্যপটে সাকিব। আর তিনি নায়কের ভূমিকায় মানে রাজত্বও বাংলাদেশের!
প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। দিন শেষে ৩২ রানে ৩ উইকেট! চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটাররা বুঝি এমনই। গোটা দিনটা নিজের করে নিতে লাগে মাত্র কয়েকটি মুহূর্ত!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৮৯
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭১ ওভারে ২৬০/৭ (রাভাল ১৬, লাথাম ৬৮, উইলিয়ামসন ২, টেইলর ৭৭, নিকোলস ৫৬*, স্যান্টনার ২৯, ওয়াটলিং ১, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, সাউদি ৪*; তাসকিন ১/৬৪, মিরাজ ১/৫১, রুবেল ০/৫৪, কামরুল ২/৪৮, সাকিব ৩/৩২, সৌম্য ০/১০)