আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম মৌসুম থেকে অনেক শিখেছেন লিটন দাস। শিখেছেন সতীর্থ আর প্রতিপক্ষের অনেক ক্রিকেটার থেকেও। সেই শিক্ষা সামনের মৌসুমে কাজে লাগাতে চান এই তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
Published : 12 Aug 2015, 10:02 PM
আপাতত ব্যাট-প্যাড-কিপিং গ্লাভস আর মাঠ থেকে অনেক দূরে লিটন দাস। ২০ বছরের জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছিলেন সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক ম্যাচ, টুর্নামেন্ট খেলার পর খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও। এখন শুধুই বিশ্রাম। নিজ শহর দিনাজপুরে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। আর কখনও ফিরে তাকাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম মৌসুমের দিকে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন লিটনের। প্রথম মৌসুমে খেলেছেন ৩টি টেস্ট, ৬টি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি। ঘরোয়া ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আকাশে ছিলেন কিছুটা ম্রিয়মান। তবে সম্ভাবনার ইঙ্গিতও রেখেছেন স্বল্প সময়ে। আর শিখেছেন অনেক কিছু। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে লিটন জানালেন, সেসব শিক্ষা আর দারুণ কিছু অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান সামনের পথচলায়।
“প্রথম মৌসুমটা খূব ভালো কাটেনি, খুব খারাপও নয়। আরেকটু ভালো করব বলে আশা ছিল আমার। তবে অনেক কিছু শিখেছি। সামনে অবশ্যই তা কাজে লাগবে।”
উইকেটের পেছনে জায়গা পূরণ করতে ডাক পড়ল লিটনের। তবে প্রথম সুযোগে আলো ছড়ালেন উইকেটের সামনে। ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকে প্রথম ইনিংসেই নজর কাড়লেন আলাদা করে। রান করেছিলেন ৪৪। তবে সেই ইনিংসেই এমন কিছু শট খেলেছিলেন, বিপর্যয়ের সময় নেমে যেভাবে প্রতিআক্রমণ করেছিলেন, জাত কিছুটা চিনিয়েছিলেন তাতেই। পরের টেস্টেই চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। পরের টেস্টে অবশ্য ফিরে গিয়েছিলেন ৩ রান করেই।
৩ টেস্ট খেলেছেন, তিনটিই বৃষ্টি বিঘ্নিত। ব্যাট করার সুযোগই পেয়েছেন তাই কেবল ৩ ইনিংসেই। উইকেটের পেছনেও ছিলেন দারুণ সপ্রতিভ। ওয়ানডেতে অবশ্য তুলনায় যথেষ্টই ম্লান। ভারতের বিপক্ষে ৩ ওয়ানডেতে করেছিলেন ৮, ৩৬ ও ৩৪। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ ওয়ানডেতে ০, ১৭ ও ৫।
“বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে টেস্টে একটু বেশি ভালো করেছি, তার মানে এই না যে এখানে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। ওয়ানডেতে কোনো কারণে ভালো করতে পারিনি। কিন্তু দুটিই আমি সমান পছন্দ করি। বিশ্বাস করি, দুটিতেই ভালো করতে পারি।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্স করে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় অঙ্গনে খাবি খাওয়ার নজির ক্রিকেটে আছে অসংখ্য। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান তো সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে কম। পার্থক্যটা টের পেয়েছেন লিটনও।
“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক বেশি কঠিন। বাজে বল অনেক কম পাওয়া যায় এখানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা তো বাজে বল প্রায় দেয়ই না। স্কিল লেভেলেও অনেক পার্থক্য। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটারদের সাথে খেলতে হলে তাল মিলিয়েই খেলতে হবে।”
“এই কয়দিন অনেক কিছু শিখেছি আমি। সৌম্যর ব্যাটিং দেখে শিখেছি। ফাফ দু প্লেসির ব্যাটিং দেখে শিখেছি কিভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে ব্যাটিং করতে হয়। আরও অনেক ছোট ছোট ব্যাপার আছে। আশা করি, সামনে সেই শিক্ষাগুলো কাজে লাগাতে পারব।”
নিজের পারফরম্যান্সে নিজের প্রত্যাশাটা পূরণ না হলেও দলের সাফল্যের অংশ হতে পেরে উচ্ছ্বসিত লিটন।
“দলের জয়ের চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় দুটি দারুণ উপভোগ করেছি। প্রথম ফিফটিটা ছিল একটা ব্যক্তিগত স্বস্তি। তবে দলের জয়ের আনন্দই অন্যরকম। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো না হলে যে দলের অংশ হয়ে বেশি দিন থাকতে পারবেন না, সেটা জানেন লিটন। কণ্ঠে তার টিকে থাকার প্রত্যয়।
“আগে স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলা। সেটা পূরণ হয়েছে। জানি দলে ঢোকার চেয়ে জায়গা ধরে রাখা কঠিন। এখন প্রতিযোগিতাও অনেক। আমার বিশ্বাস, পারফরম্যান্স দিয়েই টিকে থাকতে পারব।”