মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকে উপহাস করে পোস্ট করছে যে, চাল-ডাল, এমনকি টয়লেট টিস্যুও নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর আমি দেখছি, একজন মানুষের অনিশ্চয়তার আতঙ্কিত মনস্তত্ব। নিজেকে দিয়েই বুঝতে পারছি এই ভীতি আসলে একজন মানুষকে কীভাবে মানসিক দিক দিয়ে দূর্বল করে ফেলতে সক্ষম।
দু্ইদিন আগেও আমরা বুঝতে পারিনি যে একদিনে ইতালিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হবে। তেমনি আগামীকাল কী হবে তাও আমরা জানি না। এরপর কে আক্রান্ত হবে জানি না।
জার্মানি সবচেয়ে শেষে বর্ডার বন্ধ করেছে। চ্যান্সেলর বলেছেন, বর্ডার বন্ধ করে এর সংক্রমণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হবেই; বরং অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে, পরিস্থিতি আরও সংকটময় করে তুলবে।
জার্মানি আসলে ৭০ শতাংশ মানুষের সংক্রমণের জন্য মানসিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুত; তবে সেটা যেন একদিনেই ইতালির মতো একশ থেকে এক হাজারে বেড়ে না যায় সেই চেষ্টাই করছে তারা।
চিকিৎসা সেবা তখনই দেওয়া সম্ভব যখন সেটা একটি নির্দিষ্ট গতিতে বাড়তে থাকে। কভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে যেটা একেবারেই দেখা যায়নি। বরং গুণিতক হারে বেড়েছে এর প্রভাব। করোনা ভাইরাসের মহামারি মোকাবেলা করতে গিয়ে জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, "পরিস্থিতি মারাত্মক। একে মারাত্মকভাবেই নিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমাদের দেশের সমন্বিত সংহতির প্রতি আর কোনও কিছুই এমন মারাত্মক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারেনি।"
বাভারিয়াতে লকডাউন করা হয়েছে। ধারনা করা যায় সহজেই যে, খুব শীঘ্রই পুরো জার্মানিতেই লকডাউন করে দেওয়া হবে। এমনিতেও সবাই চেষ্টা করছে বাসায় থাকতে। যাদের বাসা থেকে অফিস করা সম্ভব তাদেরকে হোম অফিস করতে দেওয়া হয়েছে। বাকিরা যাদের যেতেই হবে, তাদের জন্য বলা হয়েছে সে ছাড়া বাসার বাকি সদস্যরা যেন বাইরে না যায়। প্রতি পরিবারের একজন সদস্য বাসা থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বের হবে। রেস্তোরাঁ, বার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব কিছুই এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সবাই আসলে নিজেদের কথাই চিন্তা করছে, নিজেদের জন্য ভয় পাচ্ছে। ছোট্ট একটা ফুলকপি রান্না করতে গিয়ে কালকে মনে হচ্ছিল যে, আহা পুরোটা রান্না না করে অর্ধেকটা রেখে দেই, পরে যদি না পাওয়া যায়। কারণ, শীত প্রধান জার্মানিতে সবজি প্রায় চাষই হয় না; এমনকি ধানও না।
এই চারদিনে মাত্র ছয় কেজি চাল আমরা সংরক্ষণ করতে পেরেছি। কারণ বাজারে চাল পাওয়াই যাচ্ছে না। জার্মানরা কি ভাত খুব পছন্দ করে? না, তা না। চাল এখন পরিমরি করে সবাই কিনছে কারণ এটি দীর্ঘ সময় টিকে থাকার মতো শুকনো খাবার। খাবার সংরক্ষনের বিষয়টিও বাংলাদেশের মতো একইরকম হবে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়। কারণ দুটি দেশের জলবায়ু ভিন্ন। মানে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আর আলু খোলা ছড়িয়ে রাখলে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু শীতপ্রধান দেশের ক্ষেত্রে এরকম বিষয়গুলো কতটা কার্যকর বা কত সময় পর্যন্ত কার্যকর তা জানি না।
সংস্পর্শ বাঁচিয়ে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সুপার শপের বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটগুলোও একাধিক মানুষের সংস্পর্শে আসছে স্বাভাবিকভাবেই। তাই আমরা নিজেরাই যখন খাবার স্টক করার জন্য এগুলো নিয়ে আসছি বাসায়, সেটাও কিন্তু কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। একজন বাইরে থেকে এসে হাত ধুলেন, গোসল করলেন; কিন্তু যে জিনিসগুলো বাজার থেকে নিয়ে আসলেন সেগুলোকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত করা যায়?