জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 21 Jul 2013, 10:26 AM
ইসি সচিবালয়ের উপ সচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ফেইসবুক, টুইটার ও মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে বিধি লঙ্ঘন ও ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা’ সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ইসি উপ সচিব জানান।
গত ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট এবং ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘অপপ্রচার’ রোধে হিমশিম খেতে হয় ইসিকে।
নির্বাচনে ‘ধর্মের অপব্যবহার’ ও ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে না পারায় জাতীয় সংসদে ইসির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ক্ষমতাসীন মহজোটের সাংসদরা।
এই প্রেক্ষাপটে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার রোধে ‘প্রয়োজনে’ প্রার্থিতা বাতিলের মতো শাস্তির বিধি সংযোজন করে আচরণবিধি সংশোধনের কথা বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে উপ সচিব মিহির সারওয়ার বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অপপ্রচার ও পরস্পরকে কটূক্তি করা হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণেই আচরণবিধিতে সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।”
প্রস্তাবে বলা হচ্ছে- প্রার্থীরা স্থানীয় কেবল টিভির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার চালাতে পারবেন। আচরণ বিধি অনুসরণ করে সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার চালানো যাবে।
নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করার বিষয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণবিধিতে স্পষ্ট কিছু বলা না থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে।
আচরণবিধির ১১ ধারায় বলা রয়েছে- উপাসনালয়ে প্রচার চালানোয় নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চরিত্রহনন করে বক্তব্য, উস্কানিমূলক, লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী বা তার পক্ষে দায়ী সংশ্লিষ্টকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দলকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিলের মতো ক্ষমতাও রয়েছে ইসির।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আচরণবিধি সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহযোগিতা কীভাবে নেয়া যায় সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় মাইক ব্যবহারের সময়ও এক ঘণ্টা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকে প্রচার চালানোর সুযোগ ছিল প্রার্থীদের। এখন তা বাড়িয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত করা হচ্ছে বলে ইসি উপ সচিব জানান।
পোস্টার লাগানোর জন্য নতুন কিছু স্থান সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি এতে প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের সঙ্গে জোট প্রধানের ছবিও রাখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকালে মন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিরা প্রার্থী হলে তাদের নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব করছে ইসি।
সর্বশেষ এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি ২০০৮ সালে নির্বাচনী আচরণবিধিমালায় ব্যাপক সংস্কার আনে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন কমিশন নতুন করে আবার সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে।