বাজারে অন্যায্য-একচেটিয়া প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে এমন প্রতারণা ও অপরাধমূলক, সংশয় সৃষ্টিকারী, বিভ্রান্তিকর, বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ এবং তদারককারী কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট।
Published : 21 Sep 2021, 07:22 PM
মঙ্গলবার প্রাথমিক শুনানির পর এ সংক্রান্ত রিট আবেদনে রুল দিয়েছে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হোসেনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
তথ্য, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি সচিব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহারিচালক ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত বুধবার টেলিভিশন, অনলাইন, পত্রিকাসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধমূলক, সংশয় সৃষ্টিকারী, বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের প্রচার-প্রকাশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার আদালতে এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি হয়।
শুনানির পর রুলে বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি একচেটিয়া আধিপত্য দূর বা নির্মূল করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং অপরাধমূলক, সংশয় সৃষ্টিকারী, বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের প্রচার-প্রকাশ ও অন্যায্য প্রতিযোগিতা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ ও প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ অনুযায়ী এমন ধরনের বিজ্ঞাপন এবং অন্যায্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও অপরাধমূলক, বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনদাতা ও অন্যায্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নের জবাবও চাওয়া হয়েছে রুলে।
আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী কামরুল ইসলাম নিজেই শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন তানজিদ হাসান পাপুল ও রবিউল আলম।
কামরুল ইসলাম বিডিনিউজটোন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রত্যক্ষভাবে তো নয়ই, কোনো বিজ্ঞাপনে পরোক্ষভাবেও নিজের ব্র্যান্ডকে এক নম্বর আর প্রতিযোগী ব্র্যান্ডকে দুই নম্বর বা নিকৃষ্ট বলা যাবে না। এরকম বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।
“আপনি যখন নিজের পণ্যকে এক নম্বর বলবেন, স্বাভাবিকভাবে ধরে নিতে বাজারে থাকা সমজাতীয় অন্য পণ্যগুলো দুই নম্বর, তিন নম্বর বা নিকৃষ্ট। অথচ এরকম বিজ্ঞাপন অহরহ প্রচার করা হচ্ছে।”
ভোক্তা বা ক্রেতা প্রতারিত হবেন এমন বিজ্ঞাপনও প্রচার-প্রকাশ হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “মূলধারার গণমধ্যমগুলোও এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রকাশ করছে। অথচ বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা আছে, থাকা উচিত।”
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন প্লাটফর্মে লোভনীয়, চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রচার-প্রকাশ হচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যে মূল্য ছাড় অথবা একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি, এরকম বিজ্ঞাপনে তো বাজার সয়লাব। অথচ বিষয়টি দেখার কেউ নেই। থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয়। তাই রিট আবেদনটি করা হয়েছিল। আদালত রুল দিয়েছেন।”
আবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের তদারকি ছাড়া টেলিভিশন, অনলাইন, পত্রিকা এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ ও প্রতারণামূলক, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের প্রচার-প্রকাশ ‘শিল্প সম্পত্তি সুরক্ষা’ বিষয়ক ‘প্যারিস কনভেনশন, ১৮৮৩’-এর ১০ অনুচ্ছেদ ও ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বা মেধা সম্পত্তি সুরক্ষা’ বিষয়ক ‘ট্রিপস চুক্তি’র স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ বাংলাদেশ এ কনভেনশন ও চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ।
এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৪৪ ও প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ৮ ধারায় অন্যায্য প্রতিযোগিতা প্রতিরোধ এবং প্রতারণামূলক, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনদাতাদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি এগুলো প্রচার ও প্রকাশে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।