চমকে দেওয়ার মত বিরাট ছাড়ের প্রলোভনে গ্রাহক এল পিলপিল করে, ইভ্যালি নামের এক ই কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্য কিনেই অল্প দিনে বড়লোক হয়ে যেতে চাইল কিছু মানুষ, তাদের সেই স্বপ্ন এখন পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে।
Published : 18 Sep 2021, 01:57 AM
লোভনীয় অফার ও চটকদার বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি প্রায়ই ফেইসবুক লাইভে আসতেন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল। বাংলাদেশের ই-কমার্সকে ‘অন্যরকম’ জায়গায় নেওয়ার কথা বলতেন। চারদিকে সমালোচনার মধ্যেই দিন দশেক আগে এক লাইভেও তার কণ্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাসের সুর, শুনিয়েছিলেন আশার কথা।
তবে এখন এক ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি আলোচিত এই ই কমার্স উদ্যোক্তা।
গ্রাহকের অর্থে গড়ে ওঠা শতকোটি টাকার কোম্পানি ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল এবং তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এখন গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় কারাগারে।
বছর তিনেক আগে হুট করে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজারে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ইভ্যালি যে ডুবতে বসেছে, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপে তা স্পষ্ট হতে শুরু করে।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বিশাল দেনার তথ্য সামনে এলে কোম্পানির উদ্যোক্তা রাসেলের গত তিন বছরের সব প্রতিশ্রুতি ভেসে যায় ক্ষোভ আর সমালোচনার বন্যায়।
ব্যাংকার থেকে ‘ডায়াপার’ আমদানিকারক, পরে ই-কমার্স উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়া রাসেল অফারের পর অফার দিয়ে গ্রাহক টানতে গ্রাহকের টাকাতেই নিজের মত করে সাজিয়েছেন এক বিপণন কৌশল। এ কাজ করতে গিয়ে পুরোটা সময়জুড়ে দেনাই বাড়িয়েছেন শুধু, গ্রাহককে দিতে পারেননি পণ্য।
বিশাল দেনা জমিয়ে শুধু নিজে চাপে পড়েননি, গ্রাহকদেরও তিনি বিপদে ফেলেছেন, অনেকেরই সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা।
প্রলোভনের ফাঁদ পেতে ব্যবসা চালাতে গিয়ে এখন শুধু যে নিজে ডুবতে বসেছেন তা নয়, দেশের সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতকেও আস্থার সঙ্কটে ফেলেছেন রাসেল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা ইভ্যালির সাফল্যে অনুপ্রাণিত আরও কিছু ই-কমার্স কোম্পানি ক্রেতা ঠকিয়ে হাজার কোটি টাকা প্রতারণায় জাল তৈরি করেছে।
সেখানেও হাজার হাজার গ্রাহক বেশি লাভের আশায় লোভে পড়ে ‘বিশাল ছাড়’ এর ফাঁদে পড়েছেন। টাকা বা পণ্য ফিরে পেতে এখন ধর্না দিতে হচ্ছে তাদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত তাদের দায়দেনার পরিমাণ ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা। দিনে দিনে যা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার ধরতে বিপণনের যে আগ্রাসী কৌশল নিয়ে রাসেল এগিয়েছেন, তার মূল নিশানায় ছিলেন তরুণরা।
এ সময়টায় তিনি ব্যবসার ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবতে চাননি বলেই দেনা বেড়েছে বলে মনে করছেন ইভ্যালি এবং ই কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য এ তরুণ উদ্যোক্তার আশা ছিল, গ্রাহক সংখ্যা বাড়লে বিদেশি বা দেশি বিনিয়োগ পেলেই পাল্টে যাবে পরিস্থিতি। কিন্তু পণ্য বা অর্থ না পাওয়া গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকায় ইভ্যালির ‘ফাঁকি’টা সামনে চলে আসে, পরিস্থিতি যায় পাল্টে।
দিন দশেক আগে এক ফেইসবুক লাইভে জেলে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছিলেন ইভ্যালির এমডি রাসেল। আর বৃহস্পতিবারই রাসেল ও নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এক গ্রাহকের তিন লাখ টাকার প্রতারণার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ইভ্যালির কাছে কোটি কোটি টাকা পাবেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা অনেক।
গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে মাসের পর মাস অপেক্ষা করা এসব বড় পাওনাদারদের অনেকেই তার জেলে যাওয়াকে ভালো ভাবে নিচ্ছেন না। তাদের ভয়, রাসেল জেলে থাকলে তাদের টাকা আটকে থাকবে। তার বদলে টাকা ফেরত পেতে রাসেলকে ‘মুক্ত’ রেখে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি তাদের।
ইভ্যালির কাছ থেকে অর্ধেক দামে গৃহস্থালির আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, শখের মোটরসাইকেল, ওয়াশিং মেশিনসহ অন্যান্য বিলাসী পণ্য কিনে বহু তরুণ এ কোম্পানির ‘ভক্ত’ হয়ে গিয়েছিলেন। এদের কেউ কেউ আবার বেশি লাভের লোভে পেশাদার ক্রেতাও বনে গিয়েছিলেন।
যিনি প্রথমবার অর্ধেক দামে একটি মোটরসাইকেল কিনতে পেরেছিলেন, তিনি পরে আরও লাভের আশায় ১০টা মোটরসাইকেল কেনার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে বসলেন ইভ্যালিতে। কিন্তু এবার আর পণ্য বুঝে পেলন না, টাকাও ফেরত এল না। ক্রেতা পড়লেন গাড্ডায়।
এভাবে প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা করে, জমি বা গয়না বেচে সেই টাকা ইভ্যালিতে লগ্নি করে এখন মহাবিপদে আছেন বহু গ্রাহক।
৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইভ্যালি নানা অজুহাতে মাসের পর মাস তাদের পণ্য দেয়নি। টাকা ফেরত চেয়ে সেটাও পাননি গ্রাহকরা। এরকম হাজারো অভিযোগ এখন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জমা পড়ছে।
এ বিষয়ে রাসেলের ভাষ্য ছিল- মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করতে গিয়ে বড় ধরনের মূল্যছাড় দিতে হয়েছে তাকে। ফলে এসব টাকা মূল্যছাড়ের পেছনে ‘বার্ন’ (খরচ) হয়ে গেছে। এখন গ্রাহকের পণ্য বুঝিয়ে দিতে তার ছয় মাস সময় দরকার।
তার বক্তব্য ছিল, এই সময়ের মধ্যে বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগ পেলে তিনি সহজেই টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। তা না হলে সামান্য লাভের মার্জিনে যেসব পণ্য বিক্রি হবে, তার লাভ থেকেই দায়দেনা পরিশোধ করা যাবে।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল বলেছেন, একটি প্রতিবেদনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা বলা হলেও তার দায়ের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি।
আর ইভ্যালিতে কর্মরতরা বলছেন, দায়-দেনার প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। কয়েক মাসের বেতন আটকা পড়েছে কর্মীদের। এর মধ্যেও গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনার বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে মানসিক চাপে রয়েছেন তারা।
পণ্য সরবরাহ করে ইভ্যালির কাছে কোটি টাকা আটকা পড়েছে বড় অনেক কোম্পানিরও।
শুরু থেকেই ইভ্যালির সঙ্গে কাজ করছেন এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৮ সালের শুরুতে মাত্র এক লাখ টাকা ‘পেইডআপ ক্যাপিটালে’ ইভ্যালির যাত্রা শুরু। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর ঘটা করে উদ্বোধন হয়; বিভিন্ন বিভাগে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত জুলাইয়ে সঙ্কটের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর সময় কোম্পানিতে ১ এক হাজার ৯৫০ জনের কর্মসংস্থান ছিল, যাদের বড় অংশই বয়সে তরুণ।
গতমাসে খবর আসে, ভেতরে ভেতরে কর্মীদের বিদায় করে দিচ্ছে ইভ্যালি। আর তা করা হচ্ছে কয়েক মাসের বেতন বকেয়া রেখেই।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক করা রাসেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নতকোত্তর করেন। বিয়ে করেন একই বিভাগের শামীমা নাসরিনকে।
ইভ্যালির কর্মীদের ভাষ্য, রাসেল প্রকাশ্যে থাকলেও কোম্পানির প্রায় সব ধরনের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিল বিক্রমপুরের মেয়ে শামীমা এবং তার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের হাতে।
কোম্পানির হেড অব এইচআর ছিলেন রাসেলের শ্যালিকা সাবরিনা নাসরিন। ডিরেক্টর টেকনিক্যাল শামীমার বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ। ডিরেক্টর পারচেজ অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট শামীমার বন্ধু আতিকুর রহমান। আর তার দুই ভাগ্নে জাহেদ ও জুবায়ের দেখতেন মোটরসাইকেলের বিষয়গুলো।
তবে কোম্পানিকে সঠিক পথে চালিয়ে নিতে তাদের উদ্যোগের অভাব ছিল বলে ইভ্যালির উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইভ্যালিকে নিয়ে নতুন করে ব্র্যান্ডিংয়ে কোম্পানিতে যোগ দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত নাম আরিফ আর হোসাইন।
পরে তার পরামর্শেই বাংলাদেশের জনপ্রিয় জুটি তাহসান-মিথিলাকে একই অনুষ্ঠানে হাজির করা। অ্যাকাউন্ট শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাহসান-মিথিলার ওই অনুষ্ঠান করতে অর্ধকোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
গত জুনে বড় অঙ্কের বেতনে ইভ্যালির হেড অব পিআর হিসেবে যোগ দেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। তবে তার বেতনের অধিকাংশই রয়ে গেছে বকেয়া।
যোগাযোগ করা হলে শবনম ফারিয়া নিজের বেশ কিছু উপলব্ধির কথা বললেও তা গণমাধ্যমে প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
আর আরিফ বলেছেন, “আমার ছোট ভাইয়ের কাছের বন্ধু রাসেল। তাদের সঙ্কটের এক পর্যায়ে কোম্পানিকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং শাখার দায়িত্ব নিয়ে যোগ দিয়েছিলাম। সম্প্রতি সরে দাঁড়িয়েছি।”
নিজের ব্যবসা ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিভিন্ন সময় ফেইসবুক লাইভে কথা বলেছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল।
স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১১ সালে ঢাকা ব্যাংকে শুরু করেন কর্মজীবন। ব্যাংকে চাকরিরত অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে করেন এমবিএ।
ব্যাংকে চাকরি করার মধ্যেই আমদানি রপ্তানি কিংবা বড় কোনো ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। ২০১৬ সালে চীন থেকে আমদানি করা পণ্য দিয়ে ‘কিডজ ডায়াপার’ ব্র্যান্ডের নামে একটি ব্যবসা শুরু করে বেশ সাফল্যের মুখ দেখেন।
রাসেল এক ফেইসবুক লাইভে বলেছিলেন, ডায়াপারের ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন একটি পণ্য বিপণন করতে গিয়ে কীভাবে স্তরে স্তরে খরচ যোগ হয়ে এমআরপি বেড়ে যায়। ই-কমার্স এমন একটি উদ্যোগ, যেখানে সরাসরি গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দেওয়া যায় কম খরচে।
বিশ্বখ্যাত কোম্পানি অ্যামাজন কিংবা আলিবাবার মত বড় হওয়ার স্বপ্নের কথা বলতেন রাসেল। এমনকি তার ভক্তরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তাকে ‘বাংলার বেজোস’ নাম দিয়েছিলেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যবসার আনুষ্ঠানিক যাত্রার আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে দৈত্যাকার সাইনবোর্ডে ইভ্যালির বিজ্ঞাপন তুলে আলোচনায় চলে আসেন রাসেল।
যাত্রার প্রথম বছর প্রতিটি ১০ টাকায় ১০ হাজার ১৬ জিবি পেনড্রাইভ বিক্রি করে দারুণ সাড়া ফেলে দেয় ইভ্যালি। গ্রাহক বাড়াতে প্রথম বছর চমকপ্রদ বিভিন্ন অফার হাজির করলেও পরের বছর থেকে সব এলোমেলো হতে শুরু করে। লাখ লাখ গ্রাহকের টাকা ইভ্যালির হাতে জমা পড়ে যায়।
একই সঙ্গে বাড়তে থাকে বিলম্বিত হতে থাকা অর্ডারের চাপ। সামনে পেছনে না ভেবে রাসেল তখন চলে যান আগ্রাসী বিপণনে।
২০১৮ সালে যাত্রা শুরুর ৯ মাসের মাথায় এই ব্যবসার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও গ্রাহক প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সেই প্রতিবেদনে যেসব আশঙ্কার কথা বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, তার সব কটিই এখন ঘটছে।
৪৫ দিনের মধ্যে তিন লাখ টাকার বাইক দেড় লাখ টাকায় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে লাগামহীন অর্ডার নিতে থাকে।
কিন্তু এসব পণ্য সময় মত গ্রাহকের হাতে তুলে দিতে যে পরিমাণ অর্থ লগ্নি করতে হত, সেই অর্থ রাসেলের হাতে কখনই ছিল না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সময় মত পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছিল না।
কর্মকর্তারা বলছেন, বড় কোনো বিনিয়োগ পেলে গ্রাহকের এসব দায়দেনা মেটানোর পরিকল্পনা ছিল রাসেলের। তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাবও একই কথা বলছে।
ইভ্যালির একজন কর্মকর্তা জানান, মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালের অগাস্টে ইভ্যালি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির অ্যাকাউন্ট কিছুদিন স্থগিত রাখলেও তদন্ত শেষে তা আবার চালু করে দেয়। এরপরই গ্রাহকের আস্থাও ফিরে আসে। তখন যে ক্যাম্পেইনই বাজারে ছাড়া হত, গ্রাহক হুমড়ি খেয়ে পড়ত।
ধীরে ধীরে ইভ্যালির সেবার সঙ্গে যুক্ত হয় ই-ফুড, ফ্লাইট এক্সপার্ট, ই-হেলথ, বিটুবি ব্যবসার মডেল ইকানেক্ট, শ্রেণিবদ্ধ অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইবাজার, ই লজিস্টিকস, ইজব, ইখাতা ইত্যাদি।
গত জুলাই মাসের শুরুতে সরকার ইকমার্স নীতিমালা প্রকাশের পর সব অনলাইনের ‘অসাধু’ ব্যবসায় লাগাম পড়ে। ক্রয়াদেশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে, ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম টাকা গ্রহণ করা যাবে না এবং গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার আগে কোম্পানি টাকা পাবে না- এমন নির্দশেনা জারি করা হয়। মূলত এই ধাক্কাতেই চাপে পড়ে ইভ্যালি বলে বলছেন কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট চলতি দায় ৫৪৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে মার্চেন্ট বা পণ্য সরবরাহকারীরাই পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পাওনা ৩১১ কোটি টাকা।
প্রতারণা মামলায় ইভ্যালির এমডি-চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তাদের মুক্তির দাবি জানাতে শুরু করেছেন কিছু গ্রাহক। ইভ্যালির অফার, হেলপ অ্যান্ড রিভিউ পেইজে তাদের মুক্তির দাবিতে অনেকে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি অনেকে রাসেলকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন, ঠাট্টাও করছেন।
ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, “আজকের এই পরিস্থিতির জন্য ইভ্যালি কর্তৃপক্ষই দায়ী। কেউ তাদের ক্ষতি করেনি। তাদের ব্যবসার ভুল পদ্ধতির কারণে আজকে গ্রাহক, সাপ্লাইয়ার, ইভ্যালিতে যারা চাকরি করছে তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা এক বছর আগেই সতর্ক করেছিলাম। ২০১৯ সালেই পেমেন্টে এসক্রো সার্ভিস চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি গেছে। এত কিছুর পর সরকারি দপ্তরগুলো ই-কমার্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপে বেশ বিলম্ব করেছে বলেই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।“
তার মতে, সরকার হস্তক্ষেপ করতে যত দেরি করত, গ্রাহকের ক্ষতি ততই বাড়ত।
“এখন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। সরকার অনেক বেশি দেরি করেছে। কেউ বিনিয়োগ করা ছাড়া আপাতত উদ্ধারের উপায় দেখছি না। সেই সুযোগটি হয়ত এখন আরও কমে গেছে।“