হবিগঞ্জের ১৩ কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত রাখার নির্দেশ

হবিগঞ্জের সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই ও চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত সুতাং নদী ও শৈলজুড়া খালকে দূষণ থেকে রক্ষায় তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ও অন্যান্য দূষণ নিরোধক প্রযুক্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ১৩টি শিল্প কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2021, 04:45 AM
Updated : 20 Sept 2021, 11:52 AM

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

এই ১৩ শিল্প কারখানা হল- প্রাণ আরএফএল, স্কয়ার ডেনিম, পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড, সিলভান এগ্রিকালচার লিমিটেড, স্টার পোরসেলিন লিমিটেড, হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড, হবিগঞ্জ টেক্সটাইল লিমিটেড, রংপুর মেটাল ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেড, মেইজ অ্যাডভান্সড এগ্রো রিফাইনারিস (মার) লিমিটেড, সায়হাম নিট কম্পোজিট লিমিটেড, সান বেসিক কেমিকেলস লিমিটেড, গ্লোরি এগ্রো লিমিটেড এবং রাসা কেমিকেলস লিমিটেড। 

হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই ও চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত সুতাং নদী ও শৈলজুড়া খাল। শায়েস্তাগঞ্জের আলিপুরে গড়ে তোলা শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য শৈলজুড়া খাল হয়ে সুতাং নদীতে গিয়ে মিশে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে ওই রিট আবেদন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ১৩টি শিল্প কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিতের নির্দেশ ছাড়াও দুই মাস পর পর সুতাং নদী ও শৈলজুড়া খালের পানি পরীক্ষা এবং তিন মাস পর পর আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান জানান।

এছাড়া ১৩টি শিল্প কারখানার দূষণ থেকে সুতাং নদী ও শৈলজুড়া খালকে রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন ‘সংবিধানবিরোধী, বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববর্হিভূত ও জনস্বার্থবিরোধী’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। 

সেই সঙ্গে সুতাং নদীর ওই অংশকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ও অন্যান্য প্রযোজ্য আইনের কঠোর প্রয়োগ করে অবৈধ ও অননুমোদিত ১৩টি শিল্প কারখানায় পানি, বায়ু, শব্দ ও মাটির দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

পরিবেশ সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পানি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক এবং ১৩টি শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়ছে।

রিট আবেদনে বলা হয়, ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুতাং নদী হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই এবং চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত। বোরো মৌসুমে এ নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ করে এসব এলাকার লোকজন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এক সময় এ নদীতে পুণ্যস্নান করতেন।

দেশের অন্যান্য নদীর মত এ নদীর অবস্থাও আজ  সঙ্কটাপন্ন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এ নদী দূষণের সচিত্র সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদ-প্রতিবেদন অনুযায়ী হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে গড়ে তোলা এসব শিল্প কারখানার বর্জ্য শৈলজুড়া খাল হয়ে সুতাং নদীতে গিয়ে পড়ছে।

অব্যাহত শিল্প বর্জ্যের দূষণে এ নদীর পানি কালো হয়ে গেছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে কষ্টকর হয়ে পড়েছে নদীর তীর দিয়ে মানুষের চলাচল। শুধু তাই না, দূষণের কারণে মাছশূন্য হয়ে পড়েছে এ নদী।

রিট আবেদনে বলা হয়, অব্যাহত দূষণের কারণে এ নদীর পানি দিয়ে এখন আর বোরো ফসলের সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়ছে হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশু।