পরনে গোলাপি টিশার্ট, পিঠে ফুডপান্ডার ঢাউস সাইজের ব্যাগ নিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যেই মাথায় একটা পলিথিন পেঁচিয়ে খাবার ডেলিভারি দিতে ছুটছেন হামিদ উল্লাহ।
Published : 06 Jul 2021, 11:57 PM
মিরপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র হামিদের এতদিনে ষষ্ঠ সেমিস্টারে থাকার কথা ছিল।
করোনাভাইরাস মহামারীতে একটা বছর নষ্ট হয়ে গেলে বিকল্প ভাবতে হয় তার। চলতি বছর তাই আগ-পিছু না ভেবে ভাঙাচোরা একটা সাইকেল কিনে ফুডপান্ডায় ‘রাইডার’ হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তিনি।
কোভিড সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু কঠোর লকডাউনে সব বন্ধ। রেস্তোঁরাগুলো খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাওয়া যাবে না বলে সরকারি বিধিনিষেধ রয়েছে। খাবার কিনে বাসায় নিয়ে খেতে হবে।
এ কারণে রেস্তোঁরাগুলোতে বেড়েছে অনলাইন অর্ডারের সংখ্যা। যে কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে ডেলিভারিতে নিয়োজিত রাইডারদের। এই সেবায় কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে ছুটোছুটিও বেড়েছে তাদের।
রোদ-বৃষ্টি যাই হোক অর্ডারের খাবার নিয়ে শহুরে মানুষের রসনার তৃপ্তি মেটাতে তারা দিনভর ছুটে বেড়াচ্ছেন শহরের এদিক-ওদিক। কথা বলে দেখা গেল, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফুডপান্ডার সঙ্গে যুক্ত।
“আগে ৫-৬ ঘণ্টা কাজ করলে ৬-৭শ টাকা পাওয়া যেত। এখন চারশ টাকা কামাই করা কষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি ডেলিভারিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা রাইডার পায়।“
শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডের শর্মা হাউজের নিচে ফুটপাথ ধরে বেশ কয়েকজন তরুণকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে দুজন ই-ফুড ও সহজ ফুডের সঙ্গে যুক্ত। বাকিরা ফুডপান্ডার হয়ে ডেলিভারি করেন।
তারা সবাই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের একজন মালিবাগের একটি কলেজের স্নাতকের ছাত্র কামরুজ্জামান বলেন, “আগে একটি বেসরকারি ফার্মে খন্ডকালীন কাজ করতাম। কাজটা চলে যাওয়ার পর সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরনো সাইকেল কিনে ফুডপান্ডায় যুক্ত হয়েছি। দিনে তিন-চারশ টাকা আয় হয়। তবে কষ্টও আছে।
“ফেইসবুকে দেখেন না রাইডারদের পানি ভেঙে যাওয়ার কয়েকটা ছবি ভাইরাল হইছে। মানুষ কী এমনিতেই এত ডেসপারেট হয়। একবার অর্ডার নিয়ে নিলে বৃষ্টি হোক আর পানি হোক তা পৌঁছে দিতে হবে। না হলে রাইডারের কাছ থেকে খাবারের দাম নেওয়া হবে।”
আলতাফ বলেন, “অনলাইনে অর্ডার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফুডপান্ডা, ই-ফুড, পাঠাও ফুড ও সহজ ফুডের মাধ্যমে তাদের রেস্তোঁরায় অর্ডার করছেন গ্রাহকরা।“
ডেলিভারি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিফট হিসেবে তারা কাজ নিতে পারেন। চার ঘণ্টায় ছয়টার মত ডেলিভারি দেওয়া যায়।
তবে এই লকডাউনে হঠাৎ রাইডারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রতি অর্ডার কমেছে বলে আয়েও ভাটা পড়েছে।
৬০ ফুট সড়কের আগারগাঁও এলাকার কলাপাতা রেস্তোঁরার সামনে রোববার দুপুরে দেখা গেল ফুডপান্ডার কয়েকজন রাইডার খাবারের অর্ডার নিতে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভেতর থেকে রেস্তোঁরাকর্মী তৌহিদ খাবার ডেলিভারির জন্য প্যাকেটে প্রস্তুত করে ডাকছেন ‘৩৩ নম্বর কার’। রাইডারদের একজন হাত উঠিয়ে বলছেন, এদিকে দেন।
খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে আবার অর্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেন। এরপর মোবাইলটা সাইকেলের সামনে লাগানো হোল্ডারে রেখে ছুটলেন ঠিকানা অনুযায়ী।
পাশের কাঁচালঙ্কা রেস্তোরার ব্যবস্থাপক জাফর উল্লাহ রেস্তোরার কাউন্টারে একটি ট্যাবে ফুডপান্ডার অ্যাপ খুলে বসে আছেন, অপেক্ষা কখন অর্ডার আসে।
জাফর বলেন, “ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। এবার অনলাইনের অর্ডারও আগের মত নেই।“
কাচ্চি ভাই রেস্তোঁরার ধানমণ্ডি শাখার ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউনে যেভাবে অর্ডার বাড়ার কথা ছিল, সেভাবে বাড়েনি। তবুও এসব অর্ডার নিয়েই কোনো রকমে টিকে আছি।“
মিরপুর ডিওএইচএস এর ব্যাংক কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানালেন, গত লকডাউনের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার টাকার খাবার অর্ডার করেছেন তিনি। এর মধ্যে কিছু খাবারে ছাড়ও পেয়েছেন।
লকডাউন শুরুর দিন বৃহস্পতিবার পরিবারের একজনের জন্মদিন উপলক্ষে সুলতানস ডাইন থেকে কাচ্চি অর্ডার করেছিলেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাসায় খাবার পৌঁছায় অনলাইন অর্ডার নিয়ে এখন আর সংশয় নেই বলেও জানালেন ।
আরও পড়ুন