‘এক ক্লিকে’ হাট থেকে বাসায় কোরবানির পশু

করোনাভাইরাস মহামারীতে সশরীরে হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচাতে ডিজিটাল হাট চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2021, 09:45 AM
Updated : 4 July 2021, 01:20 PM

রোববার ভার্চুয়াল মাধ্যমে ডিজিটাল কোরবানি পশুর হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে এবারের ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন।

অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এবারের ডিজিটাল হাটে এক লাখ গরু বিক্রির লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এ হাটে যদি এক লাখ গরু বিক্রি করা সম্ভব হয় তাহলে প্রায় ৫ লাখ লোক হাটে যাবে না।

“ডিজিটাল হাট থেকে পশু ‍কিনে তা ‘প্রসেস’ করে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সেবা দেওয়া হবে। এক হাজার পশু ‘প্রসেস’ করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দিতে সক্ষমতা রয়েছে।”

তবে এই সেবা নিতে হলে ক্রেতাদের ১০ জুলাইয়ের মধ্যে অর্ডার দিতে হবে বলে তিনি জানান।

মেয়র বলেন, অনলাইনে ‍যারা গরু কিনবেন তাদের কোন হাসিল দিতে হবে না।কোরবানির পশুর চামড়া দান করার জন্য মানবসেবা নামে একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে দেশে ৪১ কোটি ২২ লাখ খাবার যোগ্য প্রাণী রয়েছে। ১ কোটি ১৯ লাখ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। দেশের বাইরে থেকে যেন এ সময়ে পশু আসতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, “এক ক্লিকেই হাট থেকে হাতে পশু পৌঁছে দিতে এবার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৩টি ই-ক্যাব কোম্পানি এবং ৬০টির বেশি মার্কেটপ্লেস এ হাটে যুক্ত আছে। দেশের প্রতিটি জেলা থেকে পশু বিক্রির অনলাইন লিংকগুলো এ হাট থেকে পাওয়া যাবে।

“ক্রেতা যাতে কোনো ধরণের অসুবিধায় না পড়েন এজন্য সব ধরনের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। কোন ধরণের মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই বিক্রেতারা তাদের পশু বিক্রি করতে পারবে।”

গত বছর ডিজিটাল হাট থেকে ২৭ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বিক্রি করা হয়েছিল বলে জানান ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “গতবছরে ডিজিটাল হাটেও সফলতা পেয়েছে। মহামারীকালে এক কোটি পশুর মধ্যে যত বেশি পশু অনলাইনে কেনা যাবে তত বেশি সংক্রমণ মোকাবেলা করা যাবে। ডিজিটালি ক্রয়-বিক্রয় আরো বেশি উৎসাহিত করতে হবে।”

উদ্বোধনের পর ডিজিটাল হাট থেকে এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির পশু কেনেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

মেয়র আতিকুল ইসলাম একটি গরু পছন্দ করে মন্ত্রীকে বলেন, “এটি দেশি গরু, যার লাইভ ওয়েট ৩৫০ কেজি, চার দাঁতের গরু, আশা করি পশুটি আপনার পছন্দ হবে।

“এ গরুটি আপনার জন্য রাখা আছে। যদি চান তাহলে বাসায় পৌছে দেব আর যদি চান তাহলে কোরবানি করে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিতে পারব।”

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সবাই যেন ডিজিটাল হাট থেকে কোরবানির পশু কেনেন তার জন্য বেশি প্রচার করতে হবে।

“ঢাকায় পশু কিনে রাখা সমস্যা হয়, পশু ‍কিনে কোরবানির সময় পর্যন্ত রাখা যায় তাই এসব উদ্যেগ আরো ভাল সহায়তা করবে।”  

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এক সময় ডিজিটাল কমার্স নিয়ে ধারণা দেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। ই-ক্যাব সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল কমার্স নিয়ে যে বিভ্রান্তি তা দুর করতে পেরেছে। দেশের মানুষ শুধু কোরবানীর পশু নয় সবকিছু অনলাইনে কেনাকাটা করার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে সরকারি সেবা থেকে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের উপকারিতা সবাই পেয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “সারা দেশে ইন্টারনেটের সংযোগ রয়েছে। ডিজিটাল হাটের প্রচারণা সারা দেশে পৌছে দিয়ে আরো বেশি সম্প্রসারিত করতে চাই। অনলাইনেও এখন ক্রেতারা মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন ক্রেতারা। মহামারীর এ সময় ক্রেতারা আস্থা নিয়ে অনলাইন হাট থেকে পশু কিনেবন বলে আশা করি। ক্রেতারা যাতে কোন অভিযোগ দিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, দেশের হাজার হাজার খামারিরা তাদের পণ্য নিয়ে এখানে আসবেন বলে আশা করি। ক্রেতাদের হাটে না যেয়ে ডিজিটাল হাট থেকে পশু কেনার জন্য আহ্বান জানাই।

“দেশি গরু লনলাইনে ৪০০ কেজি লাইভ ওয়েটের গরু প্রতিকেজি ৪২৫ টাকা, ৪০১ থেকে ৫০০ কেজি ৪৭৫ টাকা এবং ৫০১ থেকে ৬০০ কেজি ৫২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। এর বাইরে হাইব্রিড বা বেশি ওজনের গরু অন্যান্য দামে বিক্রি করা হবে।”

ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলমসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।