ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সরকারি উদ্যোগে ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে সৌদি প্রবাসীদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
Published : 23 Sep 2020, 08:33 PM
বুধবার প্রবাসীদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “প্রবাসী ভাইবোনদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরুন। ধৈর্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি সরকার যদি দেখে, তাদের আইনশৃঙ্খলার প্রতি জটলা দেখানো হয়, ওরা পছন্দ করবে না। সৌদি আরব মোটেই বরদাস্ত করে না, শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তারা পছন্দ করে না।”
মহামারীর মধ্যে দেশে এসে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা প্রবাসীরা সৌদি আরবে ফেরার টিকেট না পেয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ করেছেন।
তারা বলছেন, এ মাসের মধ্যে সৌদি আরব যেতে না পারলে অনেকেই চাকরি হারাবেন। সে কারণে তাদের দ্রুত ফেরার ব্যবস্থা করা জরুরি। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সেখানে যাওয়ার টিকেটও লাগবে তাদের।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সৌদি আরবের অনুমতি না মেলায় এখনও সেদেশে ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে পারেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সও টিকেট দিতে পারছে না।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার সকালে কয়েকশ প্রবাসী কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সড়ক অবরোধ করেন এবং পরে ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন। তাদের আরেকটি দল মতিঝিল থেকে মিছিল নিয়ে দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।
বিকালে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে ওই আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা এগুলো অবলোকন করছে। তারা যদি দেখে আন্দোলন করছে, জটলা করছে, তারা ভিসা বাতিল করে দিতেপারে। ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দিতে পারে। তারা এটা করলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। আমার এই প্রবাসীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলারই সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাদের অনেকেই মার্চে মহামারীর শুরুতে দেশে আসার পর আ ফিরতে পারেননি। এখন ফেরার জন্য তারা ফ্লাইট পাচ্ছেন না। কারও কারও হাতে রিটার্ন টিকেট থাকলেও বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে। এ মাসের মধ্যে ফিরতে না পারলে চাকরি চলে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন তারা।
মহামারীতে দীর্ঘদিন আকাশপথ বন্ধ রাখার পর সৌদি আরব সরকার ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়। সে অনুযায়ী সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স এয়ারলাইনস সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু এ মাসের সব টিকেট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় আর কেউ টিকেট পাচ্ছেন না।
আবার প্রবাসীদের যাদের হাতে রিটার্ন টিকেট আছে, তার বেশিরভাগই বিমানের। কিন্তু বিমান এখনও সৌদি আরবে নামার অনুমতি পায়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সৌদি সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি, ভিসা ও ইকামার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর জন্য, তারা যাতে বিনা খরচে ফেরত যেতে পারে। সৌদি সরকার এখনো কিছু জানায়নি। .... আমাদের রাষ্ট্রদূত কাজ করছেন। আশা করছি তারা আমাদের উপর সদয় হবেন।”
সৌদি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে যারা প্রবাসীদের নিতে আসতে চায়, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, “যাতে আমাদের প্রবাসীর সহজে যেতে পারে। আমাদের বিমান প্রস্তুত আছে। যে মুহূর্তে তারা বিমানের ল্যান্ডিং রাইটটা দিবে, সাথে সাথে বিমান মুভ করবে। যারা আগে টিকেট করেছে, আগে ডেট আছে, তাদের আগে নিয়ে যাবে।”
প্রবাসীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা প্ররোচণায় পড়বেন না। এমনটা হলে আপনাদেরই ক্ষতি হবে।”
আরও পড়ুন